হাওড়া লোকসভা (Howrah Loksabha) কেন্দ্রে চারবারের তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Prasun Banerjee) করা মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতিতে। সম্প্রতি তিনি উলুবেড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমনই কথা বলেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি হাওড়া থেকে পালিয়ে আসতে চান। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তিনি কেন এমন কথা বললেন? হাওড়া শহর যেখানে তিনি ২০১৩ সাল থেকে সাংসদ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেখানে তিনি কেন আর থাকতে চান না? যদিও পালিয়ে আসার কারণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি নিজেই।
পুলিশদের ভিক্ষা করাবে বামেরা, হুঁশিয়ারি মীনাক্ষীর
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে একদম সোজাসুজি বুঝলে তাঁর বক্তব্যে মূলত হাওড়া শহরের রাজনীতি এবং উন্নয়ন বিষয়ক তার অসন্তোষই ফুটে উঠছে। তিনি উলুবেড়িয়া এলাকা, যা হাওড়ার বাইরে গ্রামীণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, সেখানে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তাঁর মতে, আরও বেশি ভালো নেতা–নেত্রী আছেন, যারা জনগণের জন্য কাজ করেন। তিনি এমনও বলেছেন, “যদি আমাকে সেখানে জায়গা দেওয়া হয়, তাহলে আমি গোল্ড কাপ পাব,” যা রাজনৈতিক আঙ্গিকে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেয়।
Table Tennis: বাংলার উপেক্ষিত অঙ্কুর
কিন্তু কেন হাওড়া শহরকে তিনি এভাবে নাকচ করেছেন? প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, শহরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার নিজের অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেকটা হতাশ করেছে। তাঁর মতে, হাওড়ায় বড় বড় লোকদের বসবাস এবং তাদের চিন্তা ভাবনা যেহেতু মূলত উন্নতির থেকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট, সেখানে তিনি তাঁর কাজ করার পরিবেশ পাচ্ছেন না। শহরের রাজনীতি, উন্নয়ন এবং সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। তিনি মনে করেন, উলুবেড়িয়া কিংবা অন্যান্য গ্রামীণ এলাকাগুলোর মধ্যে অনেকটাই উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং সেখানে তিনি আরও বেশি মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।
নদিয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তে মাটির নীচে জোড়া বাঙ্কার! তদন্তে বিএসএফ
তবে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেক কিছু খুঁজছেন, তেমনি তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নানা গুঞ্জনও তৈরি হয়েছে। এর আগে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল পুনরায় তাঁকে হাওড়া কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেখান থেকেই জিতে সংসদে চতুর্থবারের জন্য নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি কেন এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তা নিয়ে দলের নেতারা কিছুটা আশ্চর্য হয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন, তিনি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের সঙ্গে আরও কিছু অসন্তোষ বা আস্থা সংকটের ইঙ্গিত পেতে পারেন।
চলবে উন্নয়ন, এই ডিভিশনে বহু ট্রেন চলাচলে বদল আনল রেল
তবে এর একটি ইতিবাচক দিকও থাকতে পারে। হাওড়া থেকে উলুবেড়িয়া বা গ্রামীণ এলাকার প্রতি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আকর্ষণ, একদিকে যেমন গ্রামীণ উন্নয়ন ও মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়, তেমনি এটিও প্রমাণিত হয় যে, তিনি রাজনীতিতে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে চাইছেন। রাজনৈতিক মহলে এই ধরনের বক্তব্য ও মন্তব্য সাধারণত খুবই গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়। সুতরাং, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত হতাশা বা ক্ষোভের প্রকাশ হতে পারে, তবে তা সমগ্র রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা এবং ভবিষ্যত নির্বাচনী ফলাফলের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এবার সময়ই বলবে, তাঁর এই মন্তব্য রাজনীতির আঙিনায় কী ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।