১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান (Indian Constitution) গৃহীত হবার পর, ২৬শে জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবসে (Republic Day) বিশেষ অতিথি হিসাবে রাষ্ট্র প্রধান সুকর্ণকে আমন্ত্রণ জানানো হলে সম্পর্কটি প্রাথমিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। তারপর কয়েক দশক ধরে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে বিশ্ব দরবারে। দুই দেশের সামরিক দিকের বিষয় নিয়েও, সামরিক প্রধানদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন মহড়া এবং অস্ত্র ভান্ডার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী দুই দেশের বাণিজ্য ২৯.৪ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। যা এশিয়া মহাদেশের মধ্য ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারকারী দেশ।
আর এবার সংবিধান গ্রহণের ৭৫ বছর পর প্রজাতন্ত্র দিবসে ইন্দোনেশিয়ার চতুর্থ রাষ্ট্রপতি হিসাবে উপস্থিত থাকছেন প্রাবোও সুবিয়ান্তো। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মিত্রতা বহুযুগের। ভারত ছিল প্রধান এবং প্রথম দেশ যা ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। ১৯৪০ এর দশকের অন্তিম দিকে নয়াদিল্লি ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার দিকটিতে আন্তর্জাতিক স্তরে নেতৃত্ব দেয়। সেই থেকেই মিত্রতার সম্পর্ক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।
সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে শনিবার তিনি হায়দ্রাবাদে নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে বসবেন। সেখানে উঠে আসবে দুই দেশের বেশ কিছু সমঝোতা চুক্তি। যেখানে থাকছে বাণিজ্যিক এবং সামরিক দিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি। তারপর প্রাবোও রাষ্ট্রপতি দৌপ্রদী মুর্মুর আমন্রণে যোগ দেবেন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে। সব মিলিয়ে থাকছে একাধিক কর্মসূচি।
২০১৮ সালে প্রথমবার ইন্দোনেশিয়া সফর করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তখন দুই দেশের প্রশান্ত মহাসাগরীয় জল সীমান্ত নিয়ে সমঝোতা পূর্ণ একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই একই বছর সামরিক বিষয়ে উভয় পক্ষের নৌবাহিনী ও স্থলবাহিনীর খাতে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ করে। এবারো সেই সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ, ১৯৪০ দশকের শেষের দিকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হওয়ার পর প্রথম বিমান পরিষেবা চালু হয় ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া তাদের পর্যটন কেন্দ্রকে আরো বাণিজ্যিক ভাবে সুদূর প্রসারী করে তোলার জন্য ভারতীয়দের উদ্দেশে বিশেষ বার্তাও উঠে আসতে পারে বলেও মনে করছে আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আন্তর্জাতিক তিক্ততার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। যার কারণ হিসাবে ভারতকে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী দেশের তকমা দিয়ে এসেছে মৌলবাদী দেশগুলি। এমনকি পড়শী দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার হাতছানি কে যারা হাতের নাগাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য লড়াই করেছিল, সেই দেশ আজ ভারতের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে হুঙ্কার ছাড়ছে। এছাড়াও একবছর আগে পার্শবর্তী দীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ ভারতীয়দের জন্য সে দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করেন। সব মিলিয়ে যেখানে প্রায় অধিকাংশ পার্শবর্তী দেশগুলি দুই দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার মতো মৌলবাদী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে অন্তর্ভুক্তি হওয়ায় আরও একবার বিশ্ব দরবারে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিধর দেশ হিসেবেই নিজেদের মেলে ধরতে চলেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টারা ।