গোকুলাম কেরালা (Gokulam Kerala FC) অবশেষে নিজেদের প্রথম হোম ম্যাচে জয় পেয়েছে। শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আই-লিগ) দশম রাউন্ডে ইএমএস কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে ইন্টার কাশিকে ৬-২ গোলে পরাজিত করে তারা। এই জয় ছিল গোকুলাম কেরালার জন্য মৌসুমের প্রথম হোম জয় এবং এতে তারা ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, পরাজিত হলেও ইন্টার কাশির ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকার সুযোগ রয়েছে।
প্রথমার্ধে ২-২ গোলে সমতা ছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গোকুলাম কেরালা পুরোপুরি দাপট দেখিয়ে ৪টি গোল করে ম্যাচটি ৬-২ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয়। গোকুলামের এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এই ম্যাচটি তাদের মরসুমে সেরা ফিরে আসার মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবে।
গোকুলামের এই অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন মন্টেনেগ্রোর স্ট্যানিসাভিচ, যিনি দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ইগনাসিও দে লোইলওয়া তার জাদুকরী খেলা দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
ম্যাচের শুরুটা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। মাত্র তিন মিনিটের মাথায় ইন্টার কাশি গোকুলাম কেরালাকে চমকে দিয়ে প্রথম গোলটি করে। ব্রাইস মিরান্ডা পঁইত্রিশ গজ দূর থেকে গোকুলাম ডিফেন্সকে সরাসরি বিভ্রান্ত করে বলটি গোকুলামের গোলরক্ষক শিবিনরাজের নিচ দিয়ে জালে প্রবেশ করান।
তবে গোকুলাম তাড়াতাড়ি ম্যাচে ফিরতে সক্ষম হয়। দশম মিনিটে সিনিša স্ট্যানিসাভিচ ইন্টার কাশির ডিফেন্সকে হারিয়ে এক দুর্দান্ত হেডে গোকুলামের পক্ষে সমতা আনেন। এরপর ২৭ মিনিটে ইন্টার কাশি আবারো এগিয়ে যায়, একটি প্রশিক্ষণ সেশন থেকে আনা ফ্রি-কিক রুটিনে মিতিজা বাবোভিচ গোল করেন।
গোকুলাম আবারো সমতায় ফিরে আসে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে। ইগনাসিও দে লোইলোর দারুণ একটি লং বল সুহাইর ভাদাকিপিডিকার কাছে পৌঁছায়, তিনি সেটি স্ট্যানিসাভিচের কাছে পাঠালে তিনি আবারো গোল করে ম্যাচটি ২-২ করে দেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি অর্ধসমাপ্ত সুযোগ তৈরি হয়েছিল। স্ট্যানিসাভিচ ও মিরান্ডা উভয়ই গোল করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের শটগুলো গোলরক্ষকরা ভালোভাবে রুখে দেন। এরপর শেষ মুহূর্তে, গোকুলাম ম্যাচে এগিয়ে যায়। মার্টিন চাভেস একটি দুর্দান্ত পাস দিয়ে দে লোইলোর কাছে পাঠান, তিনি শট নিয়ে গোল করেন, যা গোলরক্ষক আরিন্দম ভট্টাচার্য্যের পৌঁছানোর আগেই জালে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে গোকুলাম আরও দুটি গোল করে ম্যাচে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে। প্রথমে সেরজিও পারডো এক সুইপিং মুভে গোল করে দলকে ৪-২ তে এগিয়ে দেন। এরপর ৭২ মিনিটে স্ট্যানিসাভিচ তার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এবং গোলটি করেন এক দারুণ লুপিং হেডারে, যা গোলরক্ষককে পরাস্ত করে।
এখন ম্যাচের মোড় বদলে গিয়েছিল। গোকুলাম আরো এক গোল পেতে চেয়েছিল এবং সেটা তারা পায় ইনজুরি টাইমে। ইগনাসিও দে লোইলোর একটি শট, যা মধ্যমাঠ থেকে গোলরক্ষক ভট্টাচার্য্যকে অবাক করে দিয়ে গোল হয়। শেষ পর্যন্ত, গোকুলাম এই ঐতিহাসিক জয়ের সঙ্গে মাঠ ছাড়ে, যা তাদের প্রথম হোম জয় হয়ে রইলো।
গোকুলাম কেরালা এই জয়ের মাধ্যমে নিজেদের মরসুমে এক নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। সিনিša স্ট্যানিসাভিচ, যিনি এক দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেন, তার পারফরম্যান্স ছিল চমকপ্রদ। তিনি ম্যাচে প্রায় এককভাবে দলের হয়ে তিনটি গোল করেন, যা ছিল একটি অনবদ্য প্রত্যাবর্তন। তাঁর খেলায় গোকুলামের আক্রমণ আরও শক্তিশালী এবং গতি পায়।
স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ইগনাসিও দে লোইলোয়া, যিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছিলেন, দলের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পাশাপাশি গোলে সহায়তা করেছেন। তিনি মাঠের প্রতি ইঞ্চি ব্যবহার করেছেন, বিশেষ করে তাঁর লং পাসগুলো দলের আক্রমণকে গতিশীল করেছে।
গোকুলামের কোচও দলের জয়ে প্রশংসা করেছেন, তিনি বলেন, “আমরা প্রথমার্ধে একটু অস্থির ছিলাম, তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মনোবল ও দক্ষতা বেড়ে যায়। দলের সকল খেলোয়াড় অত্যন্ত কষ্ট করেছেন এবং তার ফল আমরা পেয়েছি। আমাদের সামনে এখন আরো কঠিন ম্যাচ রয়েছে, তবে এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।”
অন্যদিকে, ইন্টার কাশির কোচ সন্তুষ্ট হলেও, দলের পক্ষে এই পরাজয়কে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলেছি, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। গোকুলাম দারুণ খেলেছে এবং তারা প্রাপ্য জয় পেয়েছে। আমাদের ভুলগুলো আমরা ঠিক করব এবং পরবর্তী ম্যাচে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব।”
গোকুলাম কেরালার এই দারুণ জয়ে তারা আই-লিগ পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে এবং পরবর্তী ম্যাচে আরও শক্তিশালী দলগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। এই দলের প্রতিভা এবং একতা তাদের সামনে আরো অনেক সাফল্য বয়ে আনবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইন্টার কাশির জন্য এই পরাজয় একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে, যেহেতু তাদের দ্বিতীয় স্থানে থাকার অবস্থান এখন শঙ্কায়। তবে দলের অভিজ্ঞতা ও কোচিং স্টাফের সহায়তায় তারা পরবর্তী ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে, এমনটাই বিশ্বাসী তারা।