পাখিদের স্বর্গরাজ্য, কোথায় গেলে দেখা মিলবে পরিযায়ীদের ?

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীতকাল বেশ আরামদায়ক। এই সময় আবহাওয়া থাকে মেঘমুক্ত। অনেকেই তাই ফুরফুরে মেজাজে দু-তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে(Travel Destinetion)আসেন কাছে পিঠে। এই সময় সাইবেরিয়া,ইউরোপ,রাশিয়া, চিন…

Where to Spot Migratory Birds and Experience Their Journey

short-samachar

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীতকাল বেশ আরামদায়ক। এই সময় আবহাওয়া থাকে মেঘমুক্ত। অনেকেই তাই ফুরফুরে মেজাজে দু-তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে(Travel Destinetion)আসেন কাছে পিঠে। এই সময় সাইবেরিয়া,ইউরোপ,রাশিয়া, চিন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি আসে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের নানা প্রান্তের জলাভূমিতে। কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এই পরিযায়ী পাখিরা আসে। আবার শীত শেষ হতেই পাড়ি দেয় নিজের দেশে। রাজস্থানের ভরতপুর, ওড়িশার চিল্কা হ্রদ, গুজরাতের কচ্ছের রণ এরকম নানা জলাভূমিতে পাখি দেখতে এবং তাদের ক্যামেরাবন্দী করতে ভিড় জমান বহু মানুষ। পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। পাখি দেখতে ও ছবি তুলতে ভালবাসলে এই শীতে ঘুরে আসুন এই জায়গাগুলি থেকে।

   

সাঁতরাগাছির ঝিল- হাওড়ার সাঁতরাগাছির ঝিলে নভেম্বর থেকেই পরিযায়ী পাখিরা আসা শুরু করে। হ্রদটি সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক পাশেই অবস্থিত এবং কাছাকাছি আবাসিক এলাকাগুলির বেশ কাছাকাছি। 32 একর জুড়ে থাকা এই হ্রদটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি সুন্দর স্থান হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখানে অগণিত প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়, যেমন ফেরুজিনাস পোচার্ড, সুইনহো’স স্নাইপ, কম্ব ডাক, নর্দার্ন পিনটেল, কর্মোরেন্টস, গ্যাডওয়াল, গারগনি, নর্দার্ন শোভেলার, ওয়াটার মুরহেন, কটন পিগমি গুজ, চিরুনি। হাঁসএবং হুইসলিং হাঁসের বিভিন্ন প্রজাতি।

রবীন্দ্র সরোবর লেক- রবীন্দ্র সরোবর (পূর্বে ঢাকুরিয়া লেক নামে পরিচিত) হল পশ্চিমবঙ্গর দক্ষিণ কলকাতার একটি কৃত্রিম হ্রদ, বাগান এবং পার্ক । নামটি হ্রদের পার্শ্ববর্তী এলাকাকেও নির্দেশ করে। এটি উত্তরে সাউদার্ন অ্যাভিনিউ , পশ্চিমে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, পূর্বে ঢাকুরিয়া এবং দক্ষিণে কলকাতা শহরতলির রেলওয়ে ট্র্যাক দ্বারা ঘেরা। কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর লেকও পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যায়। এবছর লেজার হোইয়াট থ্রোট, চেস্টনাট উইন্ড কুক্কুর মতো পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছে রবীন্দ্র সরোবর লেকে।

সুন্দরবন- শীতের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসে সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায়। মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির মতো বিভিন্ন জায়গায় টেরেক স্যান্ডপাইপার, কমন রেডশ্যাঙ্ক, গ্রে হেডেড ল্যাপউইং, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার ইত্যাদি পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে প্রায় 248টি পাখির প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ অক্ষাংশ থেকে প্রচুর পরিযায়ী পাখি যারা শীতের মাসে আসে হেরন, ইগ্রেটস, করমোরেন্টস, স্টর্কস, গ্রিন পিজিয়নস, স্যান্ড পাইপারস, বড় এবং ছোট স্পুনবিল, ডার্টার্স, সিগাল, Teal, Partridges, বন্য গিজ এবং হাঁসের মহান বৈচিত্র্য.

গজলডোবা- জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের ওদলাবাড়ির খুব কাছেই রয়েছে ছোট্ট গ্রাম গজলডোবা। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে এই গ্রাম ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। চাষের কাজের জন্য তিস্তার উপর বাঁধ দেওয়ার ফলে এখানে তৈরি হয়েছে নীল জলাধার। অসংখ্য পরিযায়ী পাখি প্রতি বছর ভিড় করে এই হ্রদগুলিতে। দেখা মিলতে পারে হাতিরও। গজলডোবার এক পাশে রয়েছে অপালচাঁদ অরণ্য এবং আর এক দিকে রয়েছে বৈকুণ্ঠপুর অরণ্য। তিস্তা নদীর উপর মৎস্যজীবীদের নৌকায় চেপে চারিদিকটা ঘুরে দেখতে মন্দ লাগবে না। ভাগ্য সহায় থাকলে এই গ্রাম থেকেই দেখা মিলতে পারে কাঞ্চনজঙ্ঘারও। রেড নেপড আইবিস,রিভার ল্যাপউইং, লিটল রিংড প্লোভার, নর্দার্ন ল্যাপউইং-এর মতো পাখির দেখা মেলে এই গ্রামে।

চুপির চর- নবদ্বীপ থেকে সামান্য দূরে পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল ভিড় জমাতে শুরু করে। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায় তাদের আনাগোনা। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে রয়েছে অসপ্রে, রুডি শেলডাক, স্মল প্রাটিনকোল, রিভার ল্যাপ উইং, গ্রে হেরন, পার্পল হেরন, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, গ্রিন বি ইটার। শীত পড়লেই মধ্য ও উত্তর এশিয়া, ইউরোপ, তিব্বত, সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিদের কেউ কেউ যেমন আসে, তেমনই আবার এই রাজ্যের উত্তরবঙ্গ থেকেও কয়েক প্রজাতির পাখি চলে আসে তুলনায় উষ্ণ দক্ষিণ বা মধ্য বঙ্গে খাবারের খোঁজে কিংবা এবং প্রজননের প্রয়োজনে। ছবি তোলার শখ থাকলে এই জায়গা আদর্শ। কাছ থেকে পাখি দেখা ও ছবি তোলার জন্য নৌকায় চড়ে হ্রদের বুকে ভেসে পড়তেই পারেন।

পিয়ালি দ্বীপ- পিয়ালি দ্বীপ হল সুন্দরবনের একটি মনোরম প্রবেশদ্বার, যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ 24 পরগণা জেলায় অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, সুন্দরবনের দ্বারপ্রান্তে, পিয়ালী দ্বীপ পিয়ালি নদীর ধারে একটি নির্মল ও শান্ত পরিবেশ প্রদান করে। এই দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য একটি সুবিধাজনক স্টপ-ওভার হিসাবে কাজ করে যারা ঘন ম্যানগ্রোভ আবাসস্থল, বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের আবাসস্থল, এবং অগণিত প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখতে আসে।