টেস্ট ক্রিকেটে টু টিয়ার মডেল (Two-Tier Test Model) বাস্তবায়ন হলে ক্রিকেটের মৃত্যু হবে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড একে অন্যের বিপক্ষে প্রতি ৩ বছরে অন্তত ২ বার করে মুখোমুখি হতে পারবে। এতে করে আর্থিকভাবে ব্যাপক আকারে লাভবান হবে ওই তিন দেশের বোর্ড। নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এখন পর্যন্ত আছে টেস্টের উন্মাদনা। আর্থিক সুবিধা পাবে তারাও।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা টু টিয়ার মডেল হলে আর্থিকভাবে মূল লাভ হবে, তিন দেশ মানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডেরই। একইসঙ্গে আইসিসি থেকে লভ্যাংশ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক আকারে লাভবান হবে এই তিন বোর্ড। সংস্থাটির লাভের ৩৮.৫ শতাংশ পাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বিসিসিআই। চার বছর মেয়াদী এই চুক্তির বর্তমানে চলছে দ্বিতীয় বছর। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড পাবেন ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যাবে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
২০২৭ সাল থেকে পরবর্তী বন্টনে এই শতাংশের হিসেব বাড়িয়ে নিতে আগ্রহীই হবে ভারত। লভ্যাংশ বন্টনের সবশেষ বৈঠকে ৫৭০ কোটি ইউএস ডলারের দাবি করে বসেছিল বিসিসিআই। সেই সভায় ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন জয় শাহ, তিনিই বর্তমানে আইসিসির চেয়ারম্যানের পদে বসছেন। আইসিসির সর্বোচ্চ আসনে বসেও ভারতের স্বার্থটাই আপাতত এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে বসা ব্যক্তিটি।
টেস্টের ‘মৃত্যু’, ক্ষতির মুখে বাংলাদেশসহ অন্যান্য সব দেশ
জয় শাহর এই বৈঠকের পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটেরই মৃত্যু হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে ফক্স এবং এএফপির ক্রীড়া সাংবাদিকের দল। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিগত কয়েকবছর ধরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সুবাদে বেশি ম্যাচের সুযোগ পাওয়া দলগুলো আবারও আটকে যাবে কম ম্যাচের চক্রে। নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে এবং আফগানিস্তানের মতো দলকে।
এমনিতেই বড় দলগুলোর বিপক্ষে একরকম উপেক্ষারই শিকার বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের আগে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলারই সুযোগ পায়নি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রায় ২০ বছর টেস্ট খেলেনি, ইংল্যান্ডে খেলা হয়নি ২০১০ সালের পর থেকে। অন্যদিকে, দেশের মাটিতেও এমন বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলার সুযোগ কমে আসবে।
২০২৭ সাল থেকে পরবর্তী বন্টনে এই শতাংশের হিসেব বাড়িয়ে নিতে আগ্রহীই হবে ভারত। লভ্যাংশ বন্টনের সবশেষ বৈঠকে ৫৭০ কোটি ইউএস ডলারের দাবি করে বসেছিল বিসিসিআই। সেই সভায় ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন জয় শাহ, তিনিই বর্তমানে আইসিসির চেয়ারম্যানের পদে বসছেন। আইসিসির সর্বোচ্চ আসনে বসেও ভারতের স্বার্থটাই আপাতত এগিয়ে রাখছেন ক্রিকেট বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে বসা ব্যক্তিটি।
টেস্ট ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ না নিয়ে একপ্রকার নির্বাসনে পাঠানো হবে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। যেখানে নির্বাসনের কেন্দ্র হবে টেস্টের মোড়ল দেশগুলো। আর তাতে লাভ হবে কেবল ওই তিন দেশেরই। বিলীন হয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেকার ফ্র্যাংক-ওরেল ট্রফির মতো ঐতিহাসিক সিরিজও।
২০১৬ সালেই এমনই এক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের সেই সময়ের ক্রিকেট বোর্ড প্রধান অনুরাগ ঠাকুর। নিচের দিকে থাকা দলগুলোর বড় রকমের ক্ষতি হবে এমন যুক্তিতেই দ্বি-স্তরী টেস্ট কাঠামোর ধারণা বাতিল করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন বিসিসিআই সবার স্বার্থকেই রক্ষা করতে চায়। যদিও শেষ পর্যন্ত এই ধারণায় বজায় থাকেনি জয় শাহ আমলে।
একই আশঙ্কা ছিল সদ্য বিদায়ী আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের। তার শঙ্কা ছিল, বেশিরভাগ দেশই টেস্ট ক্রিকেটের খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে সক্ষম হবে না। বর্তমান চক্রেই দক্ষিণ আফ্রিকা খরচ কমিয়ে আনার তাগিদে কোনো সিরিজেই ২টির বেশি টেস্ট খেলেনি। যা নিয়ে কথা বলেছিলেন তাদেরই তারকা মার্কো ইয়ানসেন।
তবু জানুয়ারি মাসের এক বৈঠকে দ্বি-স্তরী ক্রিকেটের জয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে বেশি। সেক্ষেত্রে বিশ্ব ক্রিকেটে টেস্ট হবে কেবল অভিজাত ক্রিকেট বোর্ডের খেলা। তাতে কিছু দেশের জন্য টেস্ট থাকবে উপভোগ্য। বাকিদের জন্য টেস্ট ক্রিকেট নিছকই এক বিলাসিতা।