মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের (Maharashtra illegal immigrants) বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত দেশ থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে মহারাষ্ট্র সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, অবৈধ অভিবাসীদের কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
গত এক মাসে ৬০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার
মহারাষ্ট্রের অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড (ATS) গত এক মাসে মুম্বই, নবি মুম্বই এবং থানে থেকে ৬০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বৈধ নথি ছাড়া ভারতে প্রবেশ এবং বসবাসের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ATS জানিয়েছে, এই বাংলাদেশিরা ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় কাজ খুঁজে নিচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে নির্মাণকাজ, হোটেল শিল্প এবং ছোটখাটো দোকানে কাজ করছিল। আরও জানানো হয়েছে, তাদের নেটওয়ার্ক বড় ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
অভিযান এখনো চলছে
ATS-এর সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান এখনো চলছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মুম্বই, নবি মুম্বই এবং থানে ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য শহরেও অভিযান প্রসারিত করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেছেন, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের presence কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। যারা বৈধ নথি ছাড়া দেশে এসেছে, তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হবে। রাজ্যে আইনের শাসন বজায় রাখতে আমরা কোনও আপস করব না।”
বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মহারাষ্ট্র সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মূলত ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করা, বেআইনি কাজকর্মে লিপ্ত থাকা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে সমস্যা সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবৈধ অভিবাসীরা অনেক সময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপেও জড়িয়ে পড়ে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
মহারাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এই পদক্ষেপকে দেশের নিরাপত্তার জন্য জরুরি বলে ব্যাখ্যা করেছে। তবে বিরোধী দলগুলি এই অভিযানের সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, অনেক বৈধ অভিবাসীকেও হয়রানি করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে বলেছেন, “সরকার অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়।”
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া দুই রকম। একদিকে মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এই অনুপ্রবেশকারীরা সক্রিয়, সেসব এলাকার বাসিন্দারা এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করছেন, অভিযানের নামে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের এই কঠোর পদক্ষেপ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও ভারত সরকার বারবার জানিয়েছে যে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, তা সময়ই বলবে।
মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে এই বড় ধরনের অভিযান রাজ্য এবং দেশের নিরাপত্তা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে এটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি যেন এই অভিযানের শিকার না হন। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে এমন পদক্ষেপ সময়োপযোগী হলেও এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।