প্রাক্তন ভারতীয় হকি খেলোয়াড় এবং কোচ জগবীর সিং (Jagbir Singh) শুক্রবার হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ৫৯ বছর বয়সী এই দুইবারের অলিম্পিয়ান হকি কিংবদন্তি এর আগে ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা ফরওয়ার্ড ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বুকের সমস্যা অনুভব করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় এবং চিকিৎসার সময়ই তিনি এক দফা বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।
জগবীর সিং বর্তমানে ওড়িশার রৌরকেলায় অবস্থিত, যেখানে তিনি হকি ইন্ডিয়া লিগ (HIL) এর জন্য গোনাসিকা দলের সাথে যুক্ত রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে দলের প্রশিক্ষণ সেশনের পর, জগবীর সিং হোটেলে ফিরে এসে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। এরপর তাকে তৎক্ষণাৎ রৌরকেলার অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার শিরায় ব্লক ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তিনি একটি মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের সূত্র মতে, জগবীর সিংয়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য ভারতের হকি কমিউনিটি এবং খেলা জগতের সকলেই তার জন্য প্রার্থনা করছেন।
জগবীর সিংয়ের খেলা জীবনের পরিচিতি
জগবীর সিং ছিলেন এক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরওয়ার্ড এবং তার খেলার কৌশল ও দক্ষতা তাকে দেশের শীর্ষ হকি খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম স্থান দিয়েছিল। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ভারতীয় হকি দলের সদস্য হিসেবে তার অবদান অপরিসীম। তিনি ভারতীয় হকি দলের হয়ে ১৭৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন এবং দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজের পরিচিতি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিক্স এবং ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেন। এই দুটি অলিম্পিকে তার খেলা ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে সিউল অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দলের ঐতিহাসিক পারফরম্যান্সের অংশ হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৮৬ সালের সিউল এশিয়ান গেমসে তিনি ভারতের হয়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন এবং ১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে রৌপ্য পদক লাভ করেন। তার খেলার কৌশল, গতিশীলতা এবং গোল করার দক্ষতা তাকে ভারতের অন্যতম সেরা ফরওয়ার্ডে পরিণত করেছিল।
হকি কোচ হিসেবে জগবীর সিংয়ের অবদান
খেলোয়াড় হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করার পর, জগবীর সিং হকি কোচ হিসেবে নতুন পথচলা শুরু করেন। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে ভারতীয় পুরুষ হকি দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর অধীনে ভারতীয় হকি দলের পারফরম্যান্সে কিছুটা উন্নতি হলেও তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরুটা সহজ ছিল না। তবে তার খেলার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা তাকে কোচ হিসেবে সফল করার জন্য বড় ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি হকি ইন্ডিয়া লিগ (HIL)-এর বিভিন্ন দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন এবং তার কোচিং দক্ষতার মাধ্যমে অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যদিও তার কোচিং কেরিয়ার কখনোই বিশ্বস্ত এবং ধারাবাহিক নয়, তবে তিনি ভারতের হকি জগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বিশ্বস্ত সহকর্মী ও অনুরাগীদের পাশে
জগবীর সিংয়ের হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, তার সহকর্মী এবং অনুরাগীরা একযোগে তার দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। ভারতীয় হকি দলের অনেক তারকা এবং বর্তমান খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
“জগবীর সিং আমাদের হকি পরিবারের একজন মূল্যবান সদস্য। তার অবদান কখনোই ভুলে যাওয়া যাবে না। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি,” বলেছেন ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক। পাশাপাশি, হকি ইন্ডিয়া ও অন্যান্য খেলোয়াড়রাও তার জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
জগবীর সিংয়ের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
জগবীর সিংয়ের মতো একজন প্রাক্তন খেলোয়াড় এবং কোচ ভারতের হকি ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন। তার খেলার শৈলী, কোচিংয়ের কৌশল এবং দেশের জন্য তার অদম্য ত্যাগ ভবিষ্যত প্রজন্মের হকি খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বর্তমানে, তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং চিকিৎসকদের মতে, যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তবে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে তাঁর ভবিষ্যতের ওপর এই সময়ে কোন পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন সবাই।
ভারতের হকি জগতের এক সময়ের কিংবদন্তি জগবীর সিং আমাদের জন্য এক জীবন্ত ইতিহাস। তার অর্জন এবং অবদান কখনোই ভুলে যাওয়া যাবে না। ভারতের হকি প্রেমী মানুষদের কাছেও তিনি একজন আইকন, যার খেলা ও কোচিংয়ের মধ্যে এক ধরনের অতুলনীয় সংযোগ রয়েছে। এখন, শুধু একটাই কামনা – তার সুস্থতা ফিরে আসুক, যাতে তিনি আবারও হকি জগতের সেবা করতে পারেন।