বিএনপি নেত্রী খালেদার সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে

গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার (Bangladesh News) গুলশানে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এই বৈঠকটি রাজনৈতিক মহলে…

Bangladesh Army Chief General Waker-uz-Zaman Meets BNP Chairperson Khaleda Zia

গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার (Bangladesh News) গুলশানে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এই বৈঠকটি রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা সৃষ্টি করেছে এবং এর পেছনে কি ধরনের আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষত, মুহাম্মদ ইউনূসের (Bangladesh News) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের উত্তেজনা এবং জামায়াতের বাড়তি প্রভাবের আবহে এই বৈঠকটি আরও গুরুত্ব পায়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের (Bangladesh News)  রাজনীতি নানা সময়ে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ যেমন রয়েছে, তেমনি উভয়ের রাজনৈতিক চালচলনেও মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেন্দ্রীয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে সেনাবাহিনীর প্রভাব রাজনৈতিক আলোচনায় বেশ গুরুত্ব লাভ করেছে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে যখন নানা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্নভাবে সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হতে চেয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের এই বৈঠকও রাজনৈতিক(Bangladesh News)  পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে।

   

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, যিনি গত বছর সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট দীর্ঘ আলোচনায় বসেছিলেন। খবর অনুযায়ী, বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সেনাপ্রধান তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিএনপি নেত্রীকে দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। পাশাপাশি, বৈঠকে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফজলে এলাহি আকবর, যিনি খালেদার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, উপস্থিত ছিলেন। এভাবে সেনাপ্রধানের উপস্থিতি এবং বৈঠকটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

এমন সময়ে এই বৈঠকটি হয়েছে, যখন দেশে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক তীব্রভাবে উত্তপ্ত। বিশেষত, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী রাজনীতি এবং জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যে খালেদা জিয়া ও বিএনপি একাধিক বার সরকারের নীতি এবং জামায়াতের প্রতি তার সমর্থন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি নেতারা জামায়াতের ইতিহাস এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি সরাসরি দাবি করেছেন যে, জামায়াত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনার পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল।

বিএনপির এই অভিযোগের মূল কারণ হলো, ইউনূস সরকারের আমলে জামায়াতের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পদে জামায়াতের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি অসন্তুষ্ট। বিশেষত, জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং তাদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রিজভি বলেছেন, ‘‘এমন কথা বলবেন না, সকলে হাসবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি জামায়াতের দেশপ্রেম নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনা করছে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

বিএনপি এবং জামায়াতের সম্পর্ক বহু বছর ধরে একটি জটিল বিষয়। বিএনপি একাধিকবার দাবি করেছে যে, জামায়াত তাদের রাজনৈতিক মিত্র, তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। কিছু মহলের মতে, সেনাপ্রধানের এই বৈঠক সরকারের প্রতি বিএনপির কোনও শিথিলতা বা সমঝোতার লক্ষণ হতে পারে, আবার অন্যদিকে এটিকে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি পরিপূরক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে যেখানে জামায়াতের প্রভাব এবং মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চলমান, অন্যদিকে বিএনপির ভবিষ্যত কৌশল ও তাদের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই বৈঠকের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিণতি এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে, এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব এবং বিএনপির সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।