সন্তোষ ট্রফিতে (Santosh Trophy) বাংলা দলের (Bengal Football Team) অবিশ্বাস্য জয়ে ফিরে এল সোনালী দিন? এই প্রশ্নই এখন ঘোরা ফেরা করছে বাংলার ফুটবল প্রেমীদের (Bengal Football Lovers) মধ্যে। কারণ আবারও সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে (Santosh Trophy Final) পৌঁছেছে বাংলা। সঞ্জয় সেনের (Sanjoy Sen) কোচিংয়ে সেরা ফুটবল খেলছে বঙ্গব্রিগেড। এই ম্যাচে তারা ৪-২ গোলে সার্ভিসেসকে (Services) হারিয়ে ফাইনালে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে। প্রথমার্ধে শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী বাংলা দল যখন ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়, তখন মনে হচ্ছিলো যে এই ম্যাচ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সার্ভিসেস লড়াই দেখে বেশ কিছুটা উদ্বেগ দেখা দেয়। তবুও শেষ পর্যন্ত বাংলার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে তাদের তুলে নিয়ে যায়।
চমকে উঠবেন জানলে, হটাৎ বছর শেষে কেন আইসিসির শিরোনামে আর্শদীপ সিং?
প্রথমার্ধে বাংলার আধিপত্য
হায়দরাবাদের বালযোগী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিফাইনালে প্রথমার্ধে বাংলা দল সম্পূর্ণ দাপট দেখিয়েছিল। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে তারা। ১৭ মিনিটে মনোতোষ মাজির দুর্দান্ত শটে সার্ভিসেসের জাল কাঁপিয়ে বাংলাকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। এরপরও বাংলা একাধিক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু সেগুলি অক্ষতই ছিল।
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে রবি হাঁসদা আরেকটি দুর্দান্ত গোল করেন। নরহরির কাছ থেকে বল পেয়ে তিনি সার্ভিসেসের গোলকিপারকে কাটিয়ে গোল করে বাংলা ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। সেই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই নরহরি নিজেই গোল করেন। সার্ভিসেসের গোলকিপার তখন বেশ এগিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু নরহরি ঠান্ডা মাথায় বলটি গোলের মধ্যে ঠেলে দিয়ে স্কোর ৩-০ করে দেন। প্রথমার্ধে সার্ভিসেসের রক্ষণ ছিল দুর্বল, এবং বাংলার ছোট ছোট পাসে খেলা তাদের রক্ষণভাগকে প্রায় চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছিল।
ক্লেন্টনের পাশে দাঁড়ালেন সাম্বা দেশের ফুটবলার থেকে বাগানের প্রাক্তন ফুটবলার!
দ্বিতীয়ার্ধে সার্ভিসসের প্রত্যাবর্তন
বিরতির পর সার্ভিসেস একেবারে নতুনভাবে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে একদম নিঃস্ব ছিল তারা, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যেন নতুন করে মেজাজে ফিরে আসে। বাংলা দল বেশ কিছু ভুল পাস দিয়ে তাদের সুযোগ দেয় এবং সার্ভিসেস এই সুযোগটি হাতছাড়া করেনি। ৫৩ মিনিটে শ্রেয়স একটি হেড দিয়ে গোল করে সার্ভিসেসকে ৩-১ করে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে বাংলা ৩-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
বাংলা দলের রক্ষণভাগে তখন কিছুটা চাপ তৈরি হয় এবং সার্ভিসেস আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যদিও সার্ভিসেস আরও একটি গোলের জন্য মরিয়া ছিল, তবে বাংলা রক্ষণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং তাদের গোললাইন সেভের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
দর্শক ভর্তি গ্যলারিতে সতীর্থকে একী শেখালেন রোহিত শর্মা?
রবি হাঁসদার শেষ মুহূর্তের গোল
এভাবেই যখন ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল, তখনই আবার বাংলার রবি হাঁসদা তাঁর জাদুকরী পাসের মাধ্যমে আরেকটি গোল করেন। ইসরাফুল দেওয়ানের পাস থেকে রবি হাঁসদা ৪-২ করে সার্ভিসেসের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন। সার্ভিসেস তখন আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি, এবং বাংলা ৪-২ গোলের জয় নিয়ে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যায়।
চিন্তিত সমর্থকরা! ডার্বি নিয়ে ধোঁয়াশা, সুবিধা পাবে ইস্টবেঙ্গল?
বাংলার ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা
এই জয় শুধু বাংলার জন্য একটি সেমিফাইনাল জয় নয়, বরং এটি বাংলা ফুটবলের পুনরুজ্জীবন। ২০১৬-১৭ মরশুমে সন্তোষ ট্রফি জয়ের পর থেকে বাংলার ফুটবল ছিল অনেকটা অন্ধকারে। মাঝে দুটি ফাইনালে উঠে হারতে হয়েছিল। তবে এই বছর সঞ্জয় সেনের নেতৃত্বে একটি নতুন দল উঠে এসেছে। নরহরি শ্রেষ্ঠা, রবি হাঁসদা, মনোতোষ মাজি, ইসরাফুল দেওয়ান, চাকু মান্ডির মতো ফুটবলাররা বাংলাকে এই সাফল্যের পথে নিয়ে এসেছে।
এই সেমিফাইনাল জয় বাংলার ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। আট বছর পর বাংলা দল আবারও ট্রফি জয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে বাংলার ফুটবল এই মুহূর্তে একদম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলার সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের দলবদ্ধতা এবং নিখুঁত পাসিং গেম।
চোট এবং কার্ড সমস্যার পর নতুন করে একী রোগ ফের বাগান শিবিরে!
বাংলা ফুটবলকে আবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে দেখা গেলে, সেটি হবে তাদের ফুটবল ইতিহাসের এক নতুন যুগের সূচনা। ৩২ বার সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা এবার ৮ বছর পর ফাইনালে উঠে শিরোপা জয় করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বাংলার সমর্থকরা এখন চাইছে, সঞ্জয় সেনের হাত ধরে যেন আবার ভারতসেরা হয়ে ওঠে বাংলা।