বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) আবারও এক বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে জনসমক্ষে হাজির হয়েছেন। এবারে তাঁর তীর প্রাক্তন ও বর্তমান কলকাতা পুলিশের কমিশনারদের দিকে। সম্প্রতি তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেন, একসময় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় এবং বর্তমান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছিলেন এবং তাঁর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন।
তসলিমা অভিযোগ করেন, প্রসূন মুখোপাধ্যায় একাধিকবার তাঁকে ফোন করে রাজ্য ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এমনকি, তাঁর রওডন স্ট্রিটের বাসায় গিয়েও নাকি তাঁকে রাজ্য ছেড়ে যেতে বলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তসলিমা বলেন, “প্রসূন মুখোপাধ্যায় বলতেন আমি যেন মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে চলে যাই অথবা ভারত ছেড়ে চলে যাই। তা না হলে বিপদ হবে।”
এছাড়াও, বর্তমান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধেও তসলিমার অভিযোগ কম নয়। তিনি দাবি করেন, বিনীত গোয়েল তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন এবং চার মাস ধরে তাঁকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। তসলিমার কথায়, “আমি বাড়ি থেকে এক পা বেরোতে পারতাম না। আমার জীবনকে দুর্বিষহ করার জন্য তারা যতরকম পন্থা অবলম্বন করা সম্ভব, তাই করতেন।”
তসলিমার আরও অভিযোগ, তাঁর লেখা মেগাসিরিয়াল দুঃসহবাস-এর বিজ্ঞাপন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়ে সিরিয়ালের সম্প্রচার বন্ধ করারও চেষ্টা করা হয়। আকাশ আট চ্যানেলের অফিসে গিয়েও নাকি হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনাগুলোর সত্যতা নিয়ে তসলিমার প্রশ্ন, “এখন কি তারা স্বীকার করবেন এসব করেছেন?”
তসলিমার এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে এই বিষয়ে রাজ্যের শাসকদল এবং বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
তসলিমা নাসরিন বহুদিন ধরেই বিতর্কিত বক্তব্য এবং সাহসী লেখার জন্য পরিচিত। তাঁর লেখা প্রায়ই ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথাগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়, যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন, কিন্তু এখানেও বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
তবে প্রসূন মুখোপাধ্যায় এবং বিনীত গোয়েল সম্পর্কে তসলিমার অভিযোগ কতটা সত্যি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একজন প্রাক্তন ও একজন বর্তমান পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তসলিমার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
তসলিমার এই অভিযোগ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা নয়, বরং এটি প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তিনি কেবল নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরেননি, বরং রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার বিষয়েও জোর দিয়েছেন।
তসলিমার এই পোস্ট ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সমর্থকরা তাঁর সাহসের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ তাঁর বক্তব্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ কী হবে এবং প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে সবাই এখন নজর রাখছে। তবে তসলিমার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি গুরুতর দিককে সামনে এনেছে, যা নিয়ে বিতর্ক চলবে আরও অনেকদিন।