অস্থায়ী কর্মীদের বিক্ষোভে, হুগলি চুঁচুড়া পৌরসভায় বন্ধ জরুরি পরিষেবা

হুগলি (hoogly) জেলার চুঁচুড়া (chuchura) পুরসভার (Municipality) অস্থায়ী কর্মীদের (Temporary workers) চলমান আন্দোলন বর্তমানে শহরের সার্বিক পরিস্থিতিকে এক গভীর সংকটে ফেলেছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মীরা…

হুগলি (hoogly) জেলার চুঁচুড়া (chuchura) পুরসভার (Municipality) অস্থায়ী কর্মীদের (Temporary workers) চলমান আন্দোলন বর্তমানে শহরের সার্বিক পরিস্থিতিকে এক গভীর সংকটে ফেলেছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মীরা ১৩ দিন ধরে আন্দোলন (protest) চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং এই আন্দোলন শহরের জরুরী পরিষেবা (services) গুলির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বেতন পরিশোধের জন্য কর্মীরা পানীয় জল সরবরাহ, আলো, এবং পরিচ্ছন্নতা পরিষেবাগুলি বন্ধ (shutdown) করে দিয়েছেন, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা আবর্জনা এবং পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর।

আন্দোলনকারীরা জানান, তারা একাধিকবার পুরসভার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বেতন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। তাদের অভিযোগ, পুরসভা রাজনৈতিক কারণে এই সমস্যাটি সমাধান করছে না। আন্দোলনরত কর্মীদের একাংশের দাবি, পুরসভার কিছু কাউন্সিলর আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে চাইছেন, আর সেই কারণে তাদের প্রতিবাদ ও দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। কর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে তারা খুবই কষ্ট পাচ্ছেন এবং শহরের সেবার জন্য তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, কিন্তু পুরসভার দিক থেকে কোনো সমাধান মিলছে না।

   

এই আন্দোলনের ফলে শহরের পরিষেবাগুলির অবস্থা অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে। শহরের রাস্তা এবং বিভিন্ন স্থান জুড়ে জমে থাকা ময়লা এবং আবর্জনা একদিকে যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে এটি সাধারণ মানুষের জন্য এক ভীষণ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছেন না, ফলে শহরের পরিবেশ একেবারে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে।

এদিকে, বিজেপি দলের পক্ষ থেকেও পুরসভার ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে। বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুবীর নাগ ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি পোস্ট করে পুরসভার পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, “পুর পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শহরের নাগরিকদের সমস্যার পরিমাণ বাড়ছে, এবং কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি তা সমাধান করার জন্য কিছুই করছেন না। পুরসভা চরম অব্যবস্থাপনার শিকার, এবং এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দলীয় কোন্দল এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে।”

সুবীর নাগ আরও বলেন, “পুরসভার ভাঁড়ার খালি হয়ে গেছে এবং পুর প্রতিনিধি নিজেদের স্বার্থে অবৈধভাবে কর্মী নিয়োগ করেছেন। তার ফলস্বরূপ শহরের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে।” তিনি প্রশ্ন করেন, “যদি চন্দননগর পুরনিগম ৬০০ কর্মী দিয়ে কার্যক্রম চালাতে পারে, তবে চুঁচুড়া পুরসভায় ২৮০০ অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল কেন?”

পুরপ্রধান অমিত রায় এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “আমরা কর্মীদের সমস্যার সমাধান করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। ডিসেম্বর মাসে কিছুটা বকেয়া বেতন মেটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমি কর্মীদের অনুরোধ করব, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে যাতে শহরের পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়।”

তবে আন্দোলনকারী কর্মীরা তাদের দাবিতে অটল রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, যতদিন না তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে, ততদিন তারা তাদের আন্দোলন বন্ধ করবেন না। তাদের দাবি, শহরের পরিষেবা পুনরুদ্ধার এবং জনগণের অসুবিধা কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এখন পর্যন্ত, এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও এর দীর্ঘস্থায়ীত্বের ফলে শহরের সেবার ওপর আরো চাপ পড়তে পারে, এবং প্রশাসনের ওপর সমালোচনার ঢেউ বাড়তে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর নানা প্রতিক্রিয়া এবং নাগরিকদের অসন্তোষ এই আন্দোলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে, এবং আগামীদিনে এটি কি ভাবে পরিণতি গ্রহণ করবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, আন্দোলনরত কর্মীরা তাদের বেতন পাওয়ার দাবি নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন এবং তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের দাবি পূরণের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।