উপাচার্য নিয়োগের (Vice-Chancellor) আবহে, আচার্যকে (Chancellor) নিশানা শিক্ষামন্ত্রীর (Education Minister)। রাজ্যের ৪৫তম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল বিধানসভায় পাস হওয়া, নতুন শিক্ষা উদ্যোগের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা একদিকে যেমন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি অন্যদিকে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকারের দৃঢ় সংকল্পকে চিহ্নিত করেছে। শিক্ষামন্ত্রী (Education Minister) ব্রাত্য বসু রাজ্যপালের ‘সই করতে গড়িমসি’ নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট বলেন, “আজ চারটি সই করছেন, কাল করছেন না। এটা শিশুসুলভ,”— যা রাজ্য সরকারের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।
রাজ্যপালের তথা আচার্যের(Chancellor) উপর আক্রমণের পর ব্রাত্য আরও বলেন, “এমন গড়িমসি শাসকদলের তরফ থেকে মেনে নেওয়া যাবে না। যতো দ্রুত কাজ শেষ হবে, ততোই রাজ্যের মঙ্গল।” শিক্ষাব্যবস্থার দিক থেকে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে একদিকে রাজ্যপাল সই করতে বিলম্ব করছেন, অন্যদিকে রাজ্য সরকার সেজন্য ক্ষুব্ধ এবং তাকে এই বিলম্বের জন্য দায়ী করছে। রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য সরকারের ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে ব্রাত্য বসু সরাসরি বলে দেন, “রাজ্যপাল যদি একসঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে (Appointments) সই করতেন, তবে রাজ্য শিক্ষাব্যবস্থা আরও দ্রুত এগোতো।”
রাজ্য সরকার বিশেষভাবে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বিল, ২০২৪ অনুমোদিত হওয়ার মাধ্যমে তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি কলকাতার ভবানীপুরে গড়ে উঠতে চলেছে এবং বিশেষভাবে শহরের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তৃণমূলের দেবাশিস কুমার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘কলকাতার গর্ব’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে মনে করেন।
ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি তৈরির পরিকল্পনা শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, শহরের সার্বিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদর কার্যালয় ভবানীপুরের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে স্থাপন হবে, এবং ৪.২২ একর জমিতে এটি গড়ে উঠবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভাষার দিক থেকে সংখ্যালঘু কলেজের জন্য একটি নতুন উদাহরণ হবে, যা গুজরাত কিংবা উত্তরপ্রদেশেও দেখতে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “এই উদ্যোগ অন্য রাজ্যে সম্ভব হয়নি। আমাদের রাজ্যে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
রাজ্যপাল তথা আচার্যের (Chancellor) ভূমিকা নিয়ে রাজ্যপালকে চ্যালেঞ্জ করে ব্রাত্য বলেন, “রাজ্যপাল যদি ভিন্ন মত পোষণ করেন, তবে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের স্পষ্ট সংকল্প জানানো হয় যে, রাজ্যপালকে কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের দাবি, এই ধরনের বিলম্ব রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে পিছিয়ে দিচ্ছে, যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
রাজ্যের এই নতুন শিক্ষাব্যবস্থার উদ্যোগের মধ্যে ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর সঙ্গে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে উত্তেজনা এখন রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকে কলকাতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন।
বিজেপির শংকর ঘোষ কিছু সংশোধন প্রস্তাব দিলেও, তাঁর ব্যক্তিগত কারণে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করার ঘটনা আরও রাজনৈতিক আলোচনা তৈরির কারণ হয়েছে। তাঁর বক্তব্যের মধ্যেও সমালোচনা ছিল, যা শাসকদলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে, রাজ্য সরকার ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে শহরের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত। এর সদর কার্যালয়ের অবস্থান ভবানীপুরে হওয়ার কারণে, এটি কলকাতার শিক্ষার মান উন্নত করার এক নতুন দিশা দেখাবে।
রাজ্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে কলকাতার শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে একত্রিত হবে এবং রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, রাজ্যপালের সইয়ের ক্ষেত্রে গড়িমসি নিয়ে যা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা শাসকদল এবং রাজ্যপালের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
রাজ্য সরকার আশা করছে, ভবানীপুর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কলকাতার শিক্ষাব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ হবে এবং ভবিষ্যতে রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও এমন উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানো হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, কলকাতার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারবে।