রাজ্যের (West Bengal) পুরনিগম, পুরসভা ও শিল্পনগরীতে সম্পত্তির (property) মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে রাজ্য সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। সোমবার বিধানসভায় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দুটি সংশোধনী বিল পেশ করবেন, যার মাধ্যমে পুর এলাকার সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের জন্য নতুন মেকানিজম চালু করা হবে। বর্তমান সময়ে, অনেক জায়গায় জমি বা ভবনের বার্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা যাচ্ছে না, বিশেষ করে যেখানে সঠিক তথ্যের অভাব বা সেলফ-অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে তথ্য গোপন করা হচ্ছে, সেইসব ক্ষেত্রে এই নতুন আইন কার্যকরী হবে।
এখন পর্যন্ত, পুরনিগম এবং পুরসভাগুলির বেশ কিছু অঞ্চলে বার্ষিক মূল্য নির্ধারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক সময় সম্পত্তির সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন জমি আংশিকভাবে ফাঁকা থাকে বা ভবন অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় থাকে। একই সঙ্গে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষ নিজের সম্পত্তির তথ্য গোপন করে কর পরিহার করতে চায়, যা রাজ্যের রাজস্বের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে নতুন বিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এই নতুন বিলে, রাজ্য সরকার প্রস্তাব করেছে যে, পুরনিগম, পুরসভা ও শিল্পনগরীতে সম্পত্তির মূল্য প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। এর মানে হল যে, যদি কোনো ভ্যালুয়েশন বোর্ড সময়মতো সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করতে না পারে, তবে পূর্ববর্তী মূল্য নির্ধারণের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি, সম্পত্তি মালিকদের জন্যও একটি নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি হবে, যাতে তারা সময়মতো তথ্য প্রদান এবং মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করতে বাধ্য হন।
সংশোধনী বিলের মাধ্যমে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করা হয়েছে, তা হল, যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার সম্পত্তির সেলফ-অ্যাসেসমেন্ট (Self-Assessment) না করেন অথবা তথ্য গোপন করেন, তবে তাকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ (30%) পেনাল্টি (Penalty) দিতে হবে। এই নিয়মটি পুরনিগম, পুরসভা ও শিল্পনগরীর প্রতিটি এলাকায় কার্যকর হবে। এর ফলে, কর প্রদানকারী ব্যক্তি বা সংস্থাকে সঠিক তথ্য জমা দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে, যা রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনবে।
১৯৯৩ সালের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট’ এবং ২০০৬ সালের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট’-এ এই সংশোধনীগুলি আনা হচ্ছে। সংশোধনীগুলির উদ্দেশ্য হল জমি এবং বাড়ির বার্ষিক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে যুক্তিগ্রাহ্য এবং সহজ করা, যাতে পুরসভাগুলির কোষাগারে বাড়তি অর্থ আসে। যদিও বিলে সুনির্দিষ্টভাবে কেমন বাড়তি রাজস্ব আসবে তার হিসাব দেওয়া হয়নি, তবে আশা করা হচ্ছে যে, এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী হবে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুরনিগম, পুরসভা এবং শিল্পনগরী এলাকায় সম্পত্তি মূল্য নির্ধারণ করবে একটি ভ্যালুয়েশন বোর্ড। এই বোর্ড প্রতি পাঁচ বছরে সম্পত্তির অ্যানুয়াল রেন্টাল ভ্যালু নির্ধারণ করে একটি রেট চার্ট তৈরি করবে। সেই চার্টের ভিত্তিতে রাজ্য বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সম্পত্তি কর ধার্য করবে। তবে যদি কোনো কারণে পাঁচ বছরের মধ্যে ভ্যালুয়েশন না করা যায়, তবে আগের রেটের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
বিলের অধীনে, রাজ্যের পুর এলাকাগুলিতে সেলফ-অ্যাসেসমেন্ট তালিকা তৈরি করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে এবং যদি কেউ এই তালিকা জমা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে আর্থিক জরিমানা দিতে হবে। এর ফলে, সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা যাবে যে, রাজ্যের কর নীতি খুবই কঠোর এবং সকলকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে বাধ্য করা হবে।
এই প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে, বিশেষত আংশিক ফাঁকা জমি বা অর্ধসমাপ্ত ভবন নিয়ে বার্ষিক মূল্য নির্ধারণে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা সমাধান করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও বিলের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে তা বলা হয়নি, তবে পুর দপ্তর জানিয়েছে যে, রাজ্য সরকারের এই নতুন পদক্ষেপের ফলে আর্থিক স্বচ্ছতা এবং রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও কার্যকরী হবে।
সব মিলিয়ে, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপটি পুরনিগম, পুরসভা ও শিল্পনগরীর সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে এবং রাজ্যের উন্নয়ন ও রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।