কাঁথির (Kathi) সমবায় ব্যাঙ্কের (Cooperative Bank) ভোটের (Vote) পরিস্থিতি এখন এক ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রায় তিন বছর ধরে ব্যাংকে পরিচালন কমিটি না থাকায়, স্পেশাল অফিসারের মাধ্যমে ব্যাঙ্কটি পরিচালিত হচ্ছিল। এর ফলে কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটি গঠনের জন্য ভোট আয়োজনের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলায় আদালত নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেয় এবং ১৫ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে।
এবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দেওয়া বেনজির নির্দেশের মাধ্যমে কাঁথির সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধা সামরিক বাহিনীকে (Central Forces) ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি, ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটগ্রহণের সুষ্ঠুতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর মাধ্যমে ভোটে কারচুপি ও অনিয়মের সম্ভাবনা রোধ করা যাবে।
কাঁথির সমবায় ব্যাঙ্কের (Kathi Cooperative Bank) ভোটের জন্য প্রথমে তিনটি স্কুলে পাঁচটি বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই তিনটি স্কুলে একই দিনে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা হওয়ার কারণে, সেখানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। পরে, নতুন পাঁচটি বুথ তৈরি করা হয়েছে, যেগুলি ওই স্কুলগুলির থেকে যথাক্রমে ৫০ মিটার, ১০০ মিটার, ৮০০ মিটার, ৩ কিলোমিটার এবং ৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এই পদক্ষেপটি ভোটারদের সুবিধা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে, কারণ অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন যে, নতুন বুথে যাতায়াত করা তাদের জন্য কঠিন হবে।
এছাড়া, শংকর বেরা, যিনি এগরা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান, তিনি সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। তার অভিযোগ ছিল, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পরিবর্তনের ফলে ভোটারদের যাতায়াতে সমস্যা হতে পারে। তবে রাজ্য সরকার এই পরিবর্তনকে সঠিক বলে অভিহিত করে, কারণ ওইদিনের পরীক্ষার কারণে স্কুলগুলিতে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট এই সওয়াল-জবাব শুনে রাজ্য সরকার এবং সমবায় নির্বাচন দপ্তরকে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়। প্রথমত, নতুন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে ভোটারদের যাতায়াতের জন্য যথাযথ পরিবহণ ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয়ত, ভোটগ্রহণে সুষ্ঠুতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে, যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নজরদারির অধীনে থাকে এবং কোন ধরনের অনিয়ম বা কারচুপি প্রতিরোধ করা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ শুধু কাঁথির সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটের জন্যই নয়, বরং রাজ্যের সমবায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে যাচ্ছে। সাধারণত, লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়, কিন্তু সমবায় নির্বাচনে এর আগে কখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নজির ছিল না। তবে এই পদক্ষেপটি রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এছাড়া, সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে, ভোটগ্রহণের প্রতিটি মুহূর্ত রেকর্ড করা হবে, যাতে কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে তা যাচাই করা সম্ভব হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাঁথির সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটে সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি, এটি অন্যান্য সমবায় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একটি নজির তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচন পরিচালনায় আরও স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠুতা নিয়ে আসবে।
এরপর, কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভোটে যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ হয়, তবে তা রাজ্যব্যাপী এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করবে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আইন এবং বিচার ব্যবস্থা পূর্ণ মর্যাদা পায়।
এমনকি, এই নির্বাচনে আধা সামরিক বাহিনী (Kathi Cooperative Bank) এবং সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থার মাধ্যমে যা কিছু ঘটবে, তা হয়তো ভবিষ্যতে অন্যান্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়ও ব্যবহৃত হবে, যাতে সারা রাজ্যে আরও বেশি জনগণের আস্থা ফিরে আসে।