কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। উৎসবের আতিশয্যে বাঙালির নাকি ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একমাত্র বাঙালিই কি উৎসবপ্রিয়? সারা বছর ধরে গোটা বিশ্বে যে কত রকমের উৎসব হয়, সে বিষয়ে ধারণা থাকলে বাঙালির বিরুদ্ধে নিন্দেমন্দ কিছুটা কমবে বই কী। সামান্য বরফ পড়া কিংবা রোদ ওঠা নিয়েও যে উৎসবে মেতে ওটাহ যায়, নৌকা বাওয়া কিংবা লন্ঠন জ্বালানোটাও একটা মেগা উৎসব হতে পারে, এমনি একটি উৎসবের কথা থাকল আপনাদের জন্য।
ডায়া ডি লাস ম্যুয়েরতোস
হিন্দু ধর্মে যেমন পরিবারের মৃত মানুষ বা পূর্বপুরুষদের আত্মাকে জল দান করার জন্য তর্পন করা হয় মহালয়ার ভোরে, ঠিক তেমন ধরনেরই রিচুয়্যাল পালন করে পশ্চিমি বহু দেশ। তবে সেই স্মৃতিতর্পন –এর ধরন একটু আলাদা। বেশ কিছু দেশে মৃতদের শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা জানানোর প্রথাটি বেশ আড়ম্বর এবং জাঁকজমকপূর্ণ। রীতিমতো উৎসবের চেহারা নেয় এই অনুষ্ঠান। তেমনই এক উৎসব হল মেক্সিকোর ডায়া ডি লাস ম্যুয়েরতোস (Dia de las Muertos)। এই উৎসবটিকে ‘ডে অফ দ্য ডেড’ও বলা হয়। সাউদার্ন মেক্সিকোতে নভেম্বরে ১ এবং ২ তারিখটি পালন করা হয় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা প্রকাশ এবং তাদের সঙ্গে পুনর্মিলনের দিন হিসেবে।
এই আকর্ষণীয় উৎসবের দিন দুটি পালিত হয় ছুটির দিন হিসেবে। তারা প্রিয় মৃত মানুষদের সম্মান দেখাতে যে অনুষ্ঠান করে তা একেবারেই তাদের নিজেদের প্রাচীন বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। তারা বিশ্বাস করে যে অক্টোবরের ৩১ তারিখ মধ্যরাতে স্বর্গের দ্বার খুলে যায় এবং সমস্ত মৃত শিশুদের আত্মাকে তাদের পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় পুরো ২৪ ঘন্টার জন্য। এই মৃত শিশুদের আত্মাকে অ্যাঙ্গেলিটোস বলা হয়। নভেম্বরের ২ তারিখটি আবার শিশু ভিন্ন অন্য সমস্ত পরিণতবয়স্ক মৃত মানুষদের আত্মার জন্য পালিত হয়।
ওইদিন নাকি তারাও তাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিতে নেমে আসেন মর্ত পৃথিবীতে। বেশিরভাগ মেক্সিকান গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সুন্দর বেদী তৈরি করা হয়। মোমবাতি, ওয়াইল্ড মেরিগোল্ড ও উজ্জ্বল লাল রঙের মোরগঝুটি ফুল দিয়ে সাজানো, ফুলের বাকেট, ফলের বাস্কেট, টার্কি মোল-এর প্লেট এবং বিশালাকায় ‘ডে অফ দ্য ডেড ব্রেডস’ দিয়ে সাজানো হয় বেদিগুলি। বেদিতে এর সঙ্গে প্রচুর অন্যান্য খাবার, সোডার বোতল, হট কোকা এবং তৃষ্ণার্ত আত্মাদের জন্য জল রাখতে হয়।
এই উৎসবের আরও একটি আকর্ষণীয় এবং বিচিত্র বিষয় হল সুগার স্কাল এবং ফোক আর্ট স্কেলিটন। খোলা বাজারে এই সময় নানা রকম ভুতুড়ে প্রতিকৃতি দেদার বিকোয় মেক্সিকোর বিভিন্ন জায়গায়। এই সুগার আর্ট ইটালিয়ান মিশনারিসদের হাত ধরে নিউ ওয়ার্ল্ড-এর কাছে আসে সতেরো শতকে।
তারা বিশ্বাস করে তাদের ছেড়ে যাওয়া প্রিয়জনদের আত্মারই প্রতনিধি এই চিনি দিয়ে বানানো করোটিগুলি। এই কারণে প্রত্যেকেই এই সুগার স্কালের কপালে তাদের মৃত প্রিয়জনদের নাম লিখে দেয়। তারা এও বিশ্বাস করে যে সুখী আত্মারা তাদের রক্ষা করে এবং তাদের পরিবারের জন্য সৌভাগ্য অ সদইচ্ছা এনে দেয়। এভাবেই উৎসবের মধ্য দিয়ে পরিবারের জীবিত এবং মৃত আত্মার পুনর্মিলন হয় এই কারণে, যাতে প্রত্যেকের পরিবারে সম্পর্কের বন্ধন অটুট থাকে।