চলতি সপ্তাহে, ২৯ নভেম্বর আইসিসি (ICC) একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে, যেখানে আলোচনার মূল বিষয় হবে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (ICC Champions Trophy) ভবিষ্যৎ কী। পাকিস্তানে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও ভারতীয় বোর্ডের (BCCI) আপত্তি এবং পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পরিস্থিতি এমন এক মোড়ে পৌঁছেছে যেখানে উভয় দেশের বোর্ডের মধ্যে কোনো সমঝোতা তৈরি হচ্ছে না, আর তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন নিয়ে সংশয় এখন প্রবল।
PV Sindhu : ২-১ ব্যবধানে দুরন্ত জয় দিয়ে কী করলেন শাটলার পিভি সিন্ধু? জানুন
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের স্পষ্ট বক্তব্য হল যে, পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার জন্য ভারত সরকারের (Indian Government) অনুমতি নেই। অর্থাৎ, যদি পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করতে হয়, তবে ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাওয়া সম্ভব নয়। ভারতীয় বোর্ডের এই অবস্থানই পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। আর পাকিস্তানও ভারতীয় দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে দুই দেশের বোর্ডের মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে।
Manolo Marquez : কেরালাকে সমীহ করে ‘বিস্ফোরক’ মানোলো মার্কুয়েজ
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (Pakistan Cricket Board) চেয়ারম্যান মহসিন নকভি সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যদি ভারত পাকিস্তানে খেলতে না আসে, তাহলে পাকিস্তানও ভারতীয় মাটিতে দলের পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ, দুই দেশের মধ্যে চলমান সম্পর্কের অচলাবস্থায়, ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নকভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা পাকিস্তানে ক্রিকেটের জন্য যা ভালো, তা-ই করব। আমরা স্পষ্টভাবে আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি, ভারত যদি পাকিস্তানে দল পাঠায় না, তাহলে পাকিস্তানও ভারতে খেলতে যাবে না। আমাদের কাছে ক্রিকেটের স্বার্থ সর্বাধিক।” তিনি আরও বলেন, “এটা হতে পারে না যে, একপক্ষ পাকিস্তানে খেলবে না, অথচ অন্য পক্ষ সেখানে গিয়ে খেলবে।”
এদিকে, ভারতের দাবির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল হাইব্রিড মডেল। ভারতীয় বোর্ড জানিয়েছে, পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার পরিবর্তে তারা এমন একটি মডেল প্রস্তাব করতে চায়, যেখানে ভারতের ম্যাচগুলি তৃতীয় কোনো দেশে আয়োজন করা হবে। হাইব্রিড মডেলটি আগেও এশিয়া কাপের সময় প্রয়োগ করা হয়েছিল, এবং সেই মডেলে ভারতের ম্যাচগুলি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বা কোনো তৃতীয় দেশেও আয়োজিত হতে পারে। তবে পাকিস্তান এই মডেল গ্রহণ করতে রাজি নয়, তাদের দাবি, পুরো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানেই আয়োজন করতে হবে।
তবে, ভারতের এই প্রস্তাব এবং পাকিস্তানের আপত্তির মধ্যেই আইসিসির বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুটি প্রধান ক্রিকেট শক্তি যদি নিজেদের অবস্থান ছাড়তে রাজি না হয়, তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভবিষ্যৎ বিপদে পড়তে পারে। বিশেষ করে, এই বছরের শেষেই আইসিসির বৈঠকে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে এটি কেবল ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়, আগামী এক দশকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙ্গিককেও প্রভাবিত করবে।
এদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি যে পদ্ধতিতে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, তাতে স্পষ্ট যে, তিনি ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই শঙ্কিত। ভারতীয় বোর্ডের সাথে আইসিসির মধ্যস্থতায় সমঝোতা না হলে, ভবিষ্যতে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারে। যদিও এদিকে, ভারতেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে আইসিসির সঙ্গে সম্পর্কের নীতিগত ভিত্তিতে, যেখানে তারা বিদেশে খেলার বিকল্প মডেল প্রচলন করতে চাইছে।
Shubman Gill : সচিন কন্যা নয়, শুভমনের প্রেমে মজলেন কোন বলিউড উর্বশী?
আইসিসি বৈঠকটি আগামী ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবং এই বৈঠকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব যে পুরো পরিস্থিতিকে জটিল করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব, ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন, দেখার জন্য আগামী বৈঠকে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি এবং এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে।
এখন প্রশ্ন হল, এই দ্বন্দ্বের মধ্যে কীভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে? হয়তো আইসিসি কোনো মধ্যপন্থা গ্রহণ করবে, কিংবা আবারও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সমঝোতার দিকে এগোবে। তবে, এক জিনিস স্পষ্ট—এবারের বৈঠকটি ক্রিকেট ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হবে।