মণিপুরে (Manipur violance) আবার নতুন করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতিগত সংঘর্ষের কারণে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই সংঘর্ষের ফলে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যা রাজ্যের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা দাবি করছেন, কেন্দ্র সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং আলোচনার জন্য কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।
‘ঘোড়া বেচাকেনা’র ছক কষতেই চপার থেকে রিসর্ট বুকিং সারা মহারাষ্ট্রের শাসক-বিরোধীদের
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মণিপুরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর। কয়েকদিন আগে ৫ হাজার আধা সেনা রাজ্যে পাঠানোর ঘোষণা করা হয়। এরপর জানা গেল, ১০ হাজার ৮০০ সেনা জওয়ান বা ৯০ কোম্পানি সেনা মণিপুরে মোতায়েন করা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্য নিরাপত্তা অধিকর্তা নিশ্চিত করেছেন, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য মোট ২৮৮ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হবে।
এখন, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আরও সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে যেখানে সংঘর্ষের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি, সেখানেই এই বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে, নতুন সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাজ্যে পৌঁছে গেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মণিপুরের মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরার জন্য আলোচনার পথও খোলেনি। বিরোধী দলগুলোর মতে, সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান নয়।
এদিকে, মণিপুরের মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ ও হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ্যের পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে অবনতির দিকে যাচ্ছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
নতুন যে সেনা কোম্পানিগুলো মণিপুরে মোতায়েন করা হচ্ছে, তারা সাধারণত সহিংসতা প্রবণ এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সেনা সদস্যরা স্থানীয় পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। প্রতিটি জেলায় আলাদা করে কন্ট্রোল রুম ও কোঅর্ডিনেশন সেল খোলা হচ্ছে, যাতে পরিস্থিতির দ্রুত ও কার্যকরী সমাধান করা সম্ভব হয়।
সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য হলো, তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করা এবং হিংসা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা। তবে, অনেকেই প্রশ্ন করছেন, সেনাবাহিনী যখন পরিস্থিতি সামলাতে আসছে, তখন কি স্থানীয় প্রশাসনের প্রভাব এবং কার্যকর ব্যবস্থা উপেক্ষিত হচ্ছে?
২৬/১১ মুম্বই হামলার অভিযুক্ত তাহাওয়ার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে
গত কয়েক সপ্তাহে মণিপুরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। সহিংসতার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সম্প্রতি, নদী থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু ষষ্ঠজনের লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি। এ ধরনের ঘটনা মণিপুরের সামাজিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি দেশের অন্য রাজ্যগুলোর জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতিগত ও সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশকে প্রভাবিত করতে পারে।
মাছ ধরতে গিয়ে নৌসেনার সাবমেরিনের সঙ্গে ধাক্কা, নিখোঁজ একাধিক মৎসজীবী
মণিপুরের মানুষ এই সংঘাতের ফলাফল এবং রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছে। স্থানীয় নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন সংগঠন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যেন তারা হিংসা ও সহিংসতার মূল কারণ চিহ্নিত করে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়।
তাদের বক্তব্য হলো, রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান সম্ভব। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এক পয়েন্টে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি সাময়িক সমাধান হিসেবেই দেখা উচিত। দীর্ঘমেয়াদী শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক আলোচনার পথই সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে।