মন্দারমণির (Mandarmoni) অবৈধ (illegal) হোটেল (hotel) ও লজ ভাঙার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট (high court) থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ (stayed) দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিংহ মন্দারমণির এসব অবৈধ হোটেল এবং লজের ভাঙার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন। এর ফলে জেলা প্রশাসনের ১১ নভেম্বরের আদেশ, যা মন্দারমণি এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার কথা বলেছিল, তা আপাতত কার্যকর হবে না।
মন্দারমণিতে অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে ২০২২ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, উপকূলীয় বিধি লঙ্ঘন করে যে হোটেলগুলি গড়ে উঠেছে, তা ভাঙতে হবে। তবে ১১ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এই নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে ১৪৪টি হোটেল, লজ, রিসর্ট এবং হোম স্টে ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়। প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মন্দারমণি হোটেল অ্যাসোসিয়েশন হাই কোর্টে আবেদন জানায়, এবং আদালত তাদের পক্ষেই রায় দেয়।
আদালত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় এবং ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসককে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আদালত ১০ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি ঠিক করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পর মন্দারমণি এবং সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে বিষয়টি পরিবেশবাদীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন এবং উপকূলীয় বিধির বিরুদ্ধে এই অবৈধ হোটেলগুলির নির্মাণ মূলত পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ ছিল। ২০২২ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত এমন একটি নির্দেশ দিয়েছিল, যা বাস্তবায়িত হলে এলাকার পরিবেশ সুরক্ষিত থাকত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, জেলা প্রশাসন এই পদক্ষেপ নবান্নকে না জানিয়ে নিয়েছে, যা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘বাংলায় কোনো বুলডোজ়ার চলবে না।’’ তাঁর এই বক্তব্যটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিকভাবে বেশ আলোচনায় আসে, কারণ এটি এক ধরনের সরকারী অবস্থান এবং প্রশাসনিক কাজের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়।
তৃণমূল এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের নেতারা প্রশাসনের পদক্ষেপকে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উপকূলীয় বিধি মেনে গড়ে ওঠা গঠনমূলক কাজে সাহায্যকারী হিসেবে দেখলেও, বিরোধী দলগুলি প্রশাসনের পদক্ষেপকে এক ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কিছু অংশের দাবি, সরকার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন ও চাকরি সৃষ্টির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
এখন পর্যন্ত, মন্দারমণির অবৈধ হোটেল ভাঙার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ এবং প্রশাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বরের পর, এই বিষয়ে আরও কোনো আইনি সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা এলাকার উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে সঠিক সমন্বয় স্থাপন করতে সাহায্য করবে।