বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কয়লা-বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতার (Mamata’s) কঠোর হুঁশিয়ারির (warning) পরেই দুর্গাপুরের দুই তৃণমূল নেতা গ্রেপ্তার হন। অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে লোহা এবং বালি পাচারে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত দুই নেতা হলেন রিন্টু পাঁজা এবং অরবিন্দ নন্দী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রিন্টু পাঁজা দুর্গাপুরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রিয়াঙ্কি পাঁজার স্বামী এবং বর্তমানে তৃণমূলের ৩ নম্বর ব্লকের সহ-সভাপতি। অপর গ্রেপ্তারকৃত অরবিন্দ নন্দী দুর্গাপুরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর।
এই গ্রেপ্তারি নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তারা দাবি করেছে, এটি শুধুমাত্র একটি ‘আই ওয়াশ’ বা রাজনৈতিক নাটক। বিরোধী নেতাদের দাবি, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দলের অন্দরেই এই গ্রেপ্তারি ঘটানো হয়েছে। তাদের মতে, এই গ্রেপ্তারির কোনো প্রকৃত উদ্দেশ্য নেই, এটি শুধুমাত্র তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলস্বরূপ।
তবে, সরকার এবং পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, কয়লা ও বালি পাচারের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কিছু দিন আগে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বেশ কিছু পুলিশকর্মী সিআইএসএফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাচারের কাজে লিপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নিচুতলার পুলিশকর্মীদের অনেকেই নানা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত। কিছু পুলিশকর্মী এবং সরকারি কর্মী নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করেন, কিন্তু তারা সরকারের প্রতি অনুগত নয়।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই কোকওভেন থানায় ডেকে এনে রিন্টু পাঁজা ও অরবিন্দ নন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের দুর্গাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, এবং আজ তাদের আদালতে তোলা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই গ্রেপ্তারি কেবল একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি তৃণমূলের রাজনৈতিক ইমেজ এবং শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের একটি চেষ্টা। তৃণমূল সরকার তাদের শাসনকে আরও শক্তিশালী করতে চাচ্ছে, এবং এটি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধানের পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারেরও প্রতীক হতে পারে।
অপরদিকে, বিরোধীরা এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভাগ-বাটোয়ারার কারণে এই গ্রেপ্তারি ঘটানো হয়েছে।