ধূপগুড়ি (Dhupguri) শহরের মধ্যপাড়া এলাকার এক বহুতলে মধুচক্র চালানোর অভিযোগে সাদা পোশাকের পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ধূপগুড়ি থানার সাদা পোশাকের পুলিশ এক অভিযানে এই ঘটনাটি উদঘাটন করে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন মহিলা এবং ২ জন পুরুষ রয়েছে। পুলিশ এই অভিযানটি চালিয়েছে মধুচক্র আসর চালানোর অভিযোগে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রায় দুই মাস আগে, যখন এক ব্যক্তি ওই বহুতলটির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর থেকে কিছুই শঙ্কা না হওয়া সত্ত্বেও, সেখানে মধুচক্রের আসর শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বা বাড়ির মালিকও কিছু জানতে পারেননি। এমনকি অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা এর সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।
এদিন, এক মহিলা দৌড়ে বাড়ির মালিকের কাছে এসে অভিযোগ করেন যে, “আমার স্বামীকে নিয়ে এখানে রাখা হয়েছে,” এরপর বাড়ির মালিক ঘটনাস্থলে যান এবং ঘরে আরো কিছু মহিলাকে দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয়। বাড়ির মালিক নিজেই পুলিশের কাছে খবর দেন এবং পুলিশ এসে সাদা পোশাকের অভিযানে ওই বাড়ি থেকে ৪ জন মহিলাকে এবং ২ জন পুরুষকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ধৃতদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন, তারা শুধু ওই বাড়িতে ঘুরতে এসেছিলেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে এই অভিযান চালিয়ে আসল ঘটনাটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের মতে, এই অভিযানটি স্থানীয়দের জন্য একটি বড় চমক, কারণ তারা সবাই ভাবতেও পারেননি যে এমন একটি অবৈধ কার্যকলাপ তাদের আশপাশেই চলছিল।
এদিকে, বাড়ির মালিক জানিয়েছেন যে, তিনি নিয়ম মেনে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন এক সবজি ব্যবসায়ীকে, তবে তার ধারণা ছিল না যে সেখানে এমন কিছু ঘটছে। তিনি জানান, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ভাড়াটিয়া কোনও অস্বাভাবিক আচরণ করেননি। এমনকি এই ঘটনাটি শোনার পর তিনি অবাক হয়েছেন এবং তার বিশ্বাসে কোনোভাবেই এটা সম্ভব ছিল না।
এছাড়া, স্থানীয় এলাকাবাসীরা এই ঘটনার খবর পেয়ে চমকে গিয়েছেন। এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, “আমরা কখনও ভাবতেই পারিনি যে আমাদের পাশের বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটছে। আমরা তো কিছুই জানতাম না, এখন শুনে খুব অবাক লাগছে।” অন্য একজন প্রতিবেশী বলেন, “এটা খুবই অবাক করা ঘটনা, এতদিন আমরা ভেবেছিলাম সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, আটক হওয়া ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, তারা এই ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে এবং তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে সম্পূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
এছাড়া, বাড়ির মালিকের দাবি, তিনি জানতেন না যে তার বাড়িতে মধুচক্রের আসর চলছে। তিনি জানান, ভাড়া নেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও অস্বাভাবিক কার্যকলাপ বা সন্দেহজনক আচরণ ছিল না। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় তিনি একদমই সাবধান ছিলেন এবং চুক্তি সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছিলেন।
এটি একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে যে, ধূপগুড়ির মতো শহরে এমন একটি ঘটনা ঘটে কীভাবে এবং কতদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলছিল। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ এবার সম্পূর্ণ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে এবং যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এছাড়াও, এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এমন ঘটনাগুলির প্রতি স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নজর রাখবে এবং ভবিষ্যতে আরও সঠিক পদক্ষেপ নেবে।
এখন পুরো এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং সাদা পোশাকের পুলিশও সেখানে আরও জোরদার নজরদারি চালাবে।