দীর্ঘ সাত দিনের ছুটির পর গত কয়েকদিন আগেই ফের অনুশীলনে ফিরেছে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্ট। ছুটি শেষে অনুশীলনে ফেরার পর থেকেই দলের ফুটবলারদের মধ্যে নতুন উদ্যম দেখা গেছে। ওডিশা ম্যাচের স্মৃতি পেছনে ফেলে এবার সামনে তাকাচ্ছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শক্তিশালী জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে নামবে হোসে মোলিনার দল। এই ম্যাচ থেকেই পুরো তিন পয়েন্ট তুলে নিয়ে লিগ টেবিলে নিজেদের স্থান মজবুত করাই এখন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।
চোট সমস্যা: কোচের চিন্তার কারণ
জামশেদপুর ম্যাচের আগে মোহনবাগান শিবিরে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ ফুটবলারদের চোট। হায়দরাবাদ এফসির বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই তারকা—স্কটিশ ফরোয়ার্ড গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং ভারতীয় মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা। চোটের কারণে ওডিশা ম্যাচে স্টুয়ার্ট স্কোয়াডে ছিলেন না। তাঁর জায়গায় দিমিত্রি পেত্রাতোসকে একাদশে রেখেছিলেন কোচ মোলিনা। অন্যদিকে, থাপার চোট জাতীয় শিবিরেও যোগ দেওয়া আটকে দিয়েছে।
স্টুয়ার্ট: মাঠে ফেরার অপেক্ষায়
গ্রেগ স্টুয়ার্টের চোটের গুরুত্ব শুরুতে বোঝা না গেলেও পরবর্তী পরীক্ষায় চোটের গভীরতা স্পষ্ট হয়। তাঁর চোট সামলাতে গিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে কোচিং স্টাফ। তবে আশার কথা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠছেন এই স্কটিশ তারকা। বর্তমানে তিনি দলের সঙ্গে পুরোপুরি বল পায়ে অনুশীলন না করলেও ফিজিক্যাল ট্রেনিং এবং সাইডলাইনে ব্যক্তিগত অনুশীলন করছেন। অনুশীলনে তাঁকে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, জামশেদপুর ম্যাচে তাঁর ফেরার সম্ভাবনা কম, তবে চোটমুক্ত হয়ে পরবর্তী ম্যাচে তাঁকে দেখা যেতে পারে।
স্টুয়ার্টের অনুপস্থিতি যে দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে কোচ মোলিনা। বিশেষ করে, তাঁর অভাব অনুভূত হয়েছে আক্রমণ ভাগে। কিন্তু পেত্রাতোসের পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও সেই অভাব পূরণ করেছে। যদিও স্টুয়ার্টের ফেরা দলের আক্রমণ ভাগে নতুন শক্তি যোগাবে, এমনটাই মনে করছেন সমর্থকরা।
থাপা: ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার পথে
ভারতীয় তারকা অনিরুদ্ধ থাপা ওডিশা ম্যাচে আহমেদ জাহুর কড়া ট্যাকলে চোট পান। এই চোটের কারণে তাঁকে মাঠ থেকে সরে যেতে হয় এবং পরবর্তী জাতীয় শিবিরেও যোগ দিতে পারেননি। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। গত মঙ্গলবার মোহনবাগানের অনুশীলনে তাঁকে দেখা গেছে। স্টুয়ার্টের মতো তিনিও সাইডলাইনে দৌড় ও হালকা ফিজিক্যাল ট্রেনিং করেছেন।
থাপা দলের মাঝমাঠের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাঁর উপস্থিতি দলের ভারসাম্য বজায় রাখে। আগামী জামশেদপুর ম্যাচে তাঁকে মাঠে নামানোর ব্যাপারে কোচ মোলিনা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ম্যাচের আগে নেওয়া হবে।
জামশেদপুর ম্যাচ: মোহনবাগানের পরিকল্পনা
জামশেদপুর এফসি এই মৌসুমে শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত। তাঁদের বিপক্ষে ম্যাচে মোহনবাগানের কোচিং স্টাফ কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। দলের অন্য ফুটবলারদেরও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অনুশীলনে আক্রমণ ও রক্ষণ কৌশল নিয়ে বিশেষ কাজ করেছেন কোচ মোলিনা। স্টুয়ার্ট ও থাপার চোট সত্ত্বেও বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দল।
দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গ্ল্যান মার্টিন্স এবং আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার সাহাল আব্দুল সামাদের ফর্ম এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আক্রমণভাগে পেত্রাতোসের পাশাপাশি হুগো বৌমাস এবং আশিক কুরুনিয়ানকেও দেখা যেতে পারে।
সমর্থকদের প্রত্যাশা
মোহনবাগানের পারফরম্যান্স সবসময়ই তাঁদের সমর্থকদের জন্য গর্বের বিষয়। ওডিশা ম্যাচে জয় সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে চোট সমস্যা মোকাবিলা করে জামশেদপুরের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়া সহজ কাজ নয়। তবুও, স্টুয়ার্ট ও থাপার দ্রুত ফেরা এবং দলের বাকিদের আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স নিয়ে আশাবাদী সমর্থকেরা।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ফুটবলারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতেও সমর্থকদের আশা জাগাচ্ছে। এখন দেখার, আগামী ২৩ নভেম্বর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে কেমন ফল করে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।