মণিপুরে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। হিংসায় বহু মানুষের প্রাণহানি এবং জনজীবনে ব্যাপক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে মণিপুর (Manipur) পুলিশের কাছ থেকে এই তিনটি মামলার তদন্তভার নিয়েছে এনআইএ। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনায় সামাজিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত হিংসার প্রকৃত কারণ এবং মূল ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মণিপুর ইস্যুতে আজ অমিত শাহের বৈঠক
এই তিনটি মামলার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল জিরিবামে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF) এবং কুকি জঙ্গিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা। এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন কুকি জঙ্গি নিহত হন। এই ঘটনায় হিংসা আরও বৃদ্ধি পায় এবং এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বাকি দুটি মামলাও মণিপুরের সাম্প্রতিক অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত। তবে তদন্তের স্বার্থে এনআইএ সেগুলি নিয়ে এখনই বিশদে কিছু জানায়নি। এনআইএ সূত্রে খবর, হিংসার পেছনে থাকা ষড়যন্ত্র এবং অর্থায়নের উৎস খুঁজে বের করাই তদন্তের মূল লক্ষ্য।
মণিপুরে সাম্প্রতিক অশান্তির কারণে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা এবং সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ঘটনার জটিলতা এবং আন্তঃরাজ্য সংযোগের কারণে এই মামলাগুলি এনআইএর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দিল্লির পথে কৃষকরা শম্ভু, খানউরি বর্ডার থেকে ১৫ তারিখে রওনা
একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “এই ধরনের ঘটনায় বহু পক্ষ জড়িত থাকে। স্থানীয় পুলিশ কিছু তথ্যের নাগাল পেলেও, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ব্যাপকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সক্ষম।”
জিরিবাম এলাকা, যা মণিপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ হিল জোন, সেখানেই গত মাসে সিআরপিএফ এবং কুকি জঙ্গিদের মধ্যে তীব্র গুলির লড়াই হয়। সিআরপিএফের একটি পেট্রোলিং দল কুকি জঙ্গিদের একটি সন্দেহজনক ঘাঁটি চিহ্নিত করে। এরপরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়, যাতে ১০ জন কুকি জঙ্গি নিহত হন।
এই সংঘর্ষের ফলে কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং হিংসা আরও ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অবরোধ, সংঘর্ষ, এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
মণিপুরে কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জমি, সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছে। সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাগুলি এই পুরনো বিরোধের ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাহ্যিক ষড়যন্ত্রকারী এবং অস্ত্রের সহজলভ্যতাও এই হিংসা বাড়িয়ে তুলেছে।
এনআইএ (NIA) ইতিমধ্যেই মণিপুরে তদন্ত শুরু করেছে। দলটি বিভিন্ন ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করছে এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এনআইএর তদন্তে এই অস্থিরতার পেছনে থাকা রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
এনআইএ-এর এক মুখপাত্র বলেন, “তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হিংসায় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের উৎস এবং অর্থায়নের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে। হিংসার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।”
মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সংঘর্ষের কারণে রাজ্যের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রাজ্যের এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, “মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করছে। এনআইএ-এর তদন্তে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
Hepatitis B: দেশে ‘হেপাটাইটিস বি’ প্রতিষেধকের হাহাকার, উদ্বিগ্ন কেন্দ্র
মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবলমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করা।
কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে হিংসার পেছনে থাকা প্রকৃত কারণগুলির সমাধান করা। পাশাপাশি, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের চাহিদা এবং অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।