মহারাষ্ট্রের (Maharashtra Election 2024) অমরাবতীতে বিধানসভা নির্বাচন প্রচারে অংশ নিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ব্যাগ তল্লাশি করার ঘটনা এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। শনিবার নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) কর্মকর্তারা তাঁর ব্যাগ পরীক্ষা করেন, যা নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে এবং শুধুমাত্র INDIA ব্লক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।
ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ মাওবাদী নিহত
শনিবার রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রের আমরাবতীতে বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে পৌঁছান। সেই সময় নির্বাচন কমিশনের কর্তারা তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করেন। কমিশনের কর্মকর্তাদের দাবি, এটি রুটিন চেকিং-এর অংশ। তবে বিরোধী দলগুলির মতে, এই ধরনের ঘটনা বিরোধীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের প্রধান প্রচারক এবং INDIA ব্লক নেতাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তাই তাঁর প্রতি এই আচরণকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনা ইতিমধ্যেই বিজেপি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে।
চা-বাগানের নালায় পড়ে মৃত্যু হস্তিশাবকের, ক্ষিপ্ত মা হাতির তান্ডব
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, “এই ধরনের তল্লাশি শুধুমাত্র INDIA ব্লক নেতাদের ক্ষেত্রে কেন? বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রে কেন এমন কঠোরতা দেখা যায় না? এটি স্পষ্ট যে, বিজেপি সরকার তার প্রভাব ব্যবহার করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে।”অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করেছে যে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং সবার জন্য সমান আচরণ করছে। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আইনের চোখে সবাই সমান। কমিশনের কাজ নিয়ম রক্ষা করা, এবং তা করতে গিয়ে কাউকে বিশেষ ছাড় দেওয়া উচিত নয়। বিরোধীরা অযথা এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে।”
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই ধরনের তল্লাশি সাধারণ একটি প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করতে এটি করা হয়েছে। কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কেবল নিয়ম মেনে চলেছি। এতে পক্ষপাতের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
তবে কমিশনের এই বক্তব্য বিরোধীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, কেন শুধুমাত্র বিরোধী শিবিরের নেতাদের ক্ষেত্রেই এ ধরনের কড়াকড়ি দেখা যায়।
বিরোধী জোট INDIA ব্লক-এর নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের মতে, কমিশন বিজেপি সরকারের প্রভাবাধীন হয়ে কাজ করছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিই নিরপেক্ষ হয়, তাহলে একই কঠোরতা বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা বাস্তবে যা দেখছি, তা পক্ষপাতেরই প্রমাণ।”তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র মহুয়া মৈত্র বলেন, “এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
গয়াতে আবর্জনার স্তূপে বিস্ফোরণ, আহত এক
মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বিজেপি ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীর মতো প্রভাবশালী নেতার ব্যাগ তল্লাশি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকার কারণে তারা নির্বাচন কমিশনের উপর তাদের প্রভাব খাটাচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে। তাদের প্রচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করছে।
সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই ঘটনাটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে, কেউ কেউ বিরোধীদের দাবি সমর্থন করে বলছেন, এটি সত্যিই পক্ষপাতমূলক আচরণের উদাহরণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ঘটনা বিরোধীদের মধ্যে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিজেপি এবং বিরোধী শিবিরের মধ্যে এই টানাপোড়েন মহারাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।”
রাহুল গান্ধীর ব্যাগ তল্লাশি নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে প্রয়োজন সমান আচরণ। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ এবং গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করতে হবে।
এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের উপর জনআস্থা বৃদ্ধির পরিবর্তে তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন একটি ঘটনা বিরোধী শিবিরের প্রচারকে আরও জোরদার করতে পারে এবং বিজেপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।