বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত গতিতে, তবে ভারত এই ক্ষেত্রে বিশ্বের গড়ের চেয়েও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের (BCG) একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ভারতীয় ব্যবসা সংস্থাগুলি অত্যাধুনিক AI প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করছে, যা দেশের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতাকে বিশ্বজুড়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। বিসিজি’র এই রিপোর্টের মাধ্যমে ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ এবং এর প্রভাব নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।
ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানী, বায়ু দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত দিল্লিবাসীর
“Where’s the Value in AI?” শীর্ষক বিসিজি’র এই রিপোর্টটি ৫৯টি দেশের ২০টিরও বেশি শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত প্রায় ১,০০০ জন প্রধান অভিজ্ঞতা কর্মকর্তা (CxO) এবং ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের উপর ভিত্তি করে তৈরি। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। এতে দশটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতকে কভার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশন, উৎপাদন এবং খুচরা বিক্রয় ইত্যাদি।
রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের কোম্পানিগুলির প্রায় ৩০ শতাংশই AI-এর সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগিয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী এই গড় মাত্র ২৬ শতাংশ। বিসিজি’র টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজিটাল অ্যাডভান্টেজ প্র্যাকটিসের ভারতীয় নেতা সায়বাল চক্রবর্তী বলেছেন, “ভারতে AI দ্রুত গ্রহণ বিশ্বে আমাদের প্রতিযোগিতার মানকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে। এখানে শতভাগ কোম্পানি AI নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, যা ভারতের প্রস্তুতির এক বিশেষ দিক তুলে ধরে।”
লঞ্চ করল LG XBOOM সিরিজের নতুন স্পিকার, যা ইনডোর আউটডোর পার্টি ইভেন্টের জন্য উপযুক্ত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের AI গ্রহণের এই তৎপরতা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ব্যবসাগুলি এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, খরচ কমানো এবং উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।ভারতে AI-এর দ্রুত উন্নয়ন এবং ব্যবহার শিল্পক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।
স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত, প্রতিটি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ব্যবসার কার্যক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের AI ব্যবহার তুলে ধরা হলো:
স্বাস্থ্য খাতে AI ব্যবহার করে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা নির্ধারণ এবং রোগীদের পর্যবেক্ষণে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা AI নির্ভর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দ্রুত এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করছে, যা সময় এবং খরচ কমাতে সহায়ক হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতে AI-এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাহক পরিষেবার মান উন্নত করতে এবং জালিয়াতি শনাক্ত করতে AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম ব্যবহার করে দ্রুত লেনদেন এবং গ্রাহকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।
উৎপাদন খাতে AI-এর সাহায্যে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খল পরিচালনা সহজতর হচ্ছে। খুচরা বিক্রয়ে গ্রাহকদের পছন্দ এবং চাহিদা বিশ্লেষণ করে বাজারে আরও লক্ষ্যভিত্তিক এবং ব্যক্তিগতকৃত পণ্য প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
ভারতের এই দ্রুত AI গ্রহণের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করছে, যেখানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে AI-কে একটি প্রধান অংশ হিসেবে সংযুক্ত করছে, যেমন ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প।
তবে, এই দ্রুত গ্রহণের সঙ্গেই রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ। AI প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী এবং পরিকাঠামোর অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ ছোট এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান AI ব্যবহারে তেমনভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবও AI গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে AI-এর দ্রুত ব্যবহার দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতার চাহিদা তৈরি হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে AI এবং মেশিন লার্নিং-এর মতো বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা সম্ভব হবে। AI ব্যবহার করে ভারতের ব্যবসাগুলি তাদের প্রতিযোগিতামূলক মান বজায় রাখতে পারবে এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারেও একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে মডেল করে ট্যাব প্রকল্পে দুর্নীতি আটকানোর নির্দেশ শিক্ষা দফতরকে
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য AI গ্রহণের এই তৎপরতা দেশের আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের (BCG) এই গবেষণা রিপোর্টটি ভারতের জন্য AI-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং এর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরেছে। ভারতের দ্রুত AI গ্রহণ বিশ্বকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে, দক্ষ জনবল, প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে AI-কে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে পারলেই ভারত বিশ্বে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।