কুকি-মৈতেই বনধের উত্তেজনার মধ্যেই জিরিবামে ৬ গ্রামবাসী অপহরণ

মণিপুরে (Manipur) গত মঙ্গলবার কুকি এবং মৈতেই সম্প্রদায়গুলি (Kuki-Meitei conflict) একে অপরের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ বনধ পালন করেছে, যাদের দাবি ছিল সম্প্রতি জিরিবাম জেলার একটি…

Kuki, Meitei Groups Call Bandhs in Manipur

মণিপুরে (Manipur) গত মঙ্গলবার কুকি এবং মৈতেই সম্প্রদায়গুলি (Kuki-Meitei conflict) একে অপরের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ বনধ পালন করেছে, যাদের দাবি ছিল সম্প্রতি জিরিবাম জেলার একটি পুলিশ স্টেশন এবং সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলায় কমপক্ষে ১০ সশস্ত্র জঙ্গি এবং ২ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর, ৬ জন নাগরিকের অপহরণের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। হামলার পর উভয় সম্প্রদায় নিজেদের দাবি নিয়ে বের হয়ে আসে, এবং মণিপুরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

মৈতেই সংগঠনগুলি দাবি করেছে যে, অপহৃত ৬ জন নাগরিক, যার মধ্যে মহিলা এবং শিশুও রয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। অন্যদিকে কুকি-জো সম্প্রদায় অভিযোগ করেছে যে, তাদের ১১ জন যুবককে “প্রতারণামূলকভাবে” এক মিথ্যা এনকাউন্টারে হত্যা করা হয়েছে। কুকি-জো সম্প্রদায়ের দাবি, ওই যুবকদের হত্যার ঘটনা একটি জঘন্য অপারেশন ছিল এবং এর মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে।

   

মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার এক তীব্র বন্দুকযুদ্ধে ১০ সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কালো কাপড়ে আবৃত হয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করে জিরিবামের বরোবেনক্রা পুলিশ স্টেশন এবং সিআরপিএফ ক্যাম্পের ওপর হামলা চালায়। তারা বেপরোয়াভাবে গুলি চালায়, যার ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সরকারি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, নিহতের সংখ্যা ১১ জনে পৌঁছেছে, তবে মণিপুর পুলিশ এর চেয়ে কম ১০ জনের কথা বলছে।

এই ঘটনার পর, মৈতেই এবং কুকি-জো গোষ্ঠীগুলি নিজেদের অঞ্চলগুলিতে একে অপরের বিরুদ্ধে বনধের ডাক দেয়। তারা দাবি করছে, হামলার পর যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনা এবং নিহতদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য। মৈতেই সম্প্রদায়ের অভিযোগ, তাদের নারীরা এবং শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। কুকি-জো সম্প্রদায়ের মতে, “ফেক এনকাউন্টার” এর মাধ্যমে তাদের যুবকদের হত্যা করা হয়েছে, যা তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি এক ধরনের নৃশংস আক্রমণ।

জিরিবামের এই হামলায় কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করছে, সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের নিরাপত্তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছে না এবং সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ আরও বাড়ছে। হামলার পর থেকে কুকি-জো সম্প্রদায় একাধিক দাবি তুলেছে, যার মধ্যে একটি হল নিখোঁজদের অবিলম্বে উদ্ধার এবং হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের দাবি।

এদিকে, মণিপুর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা বীরেন সিংহ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এই ঘটনায় তদন্ত করব এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমাদের পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন এবং সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

যদিও রাজ্যের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, তবে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছে। হামলার পর, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং আরও পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলার ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং নিহতদের পরিবারের পাশে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের রাজনীতিকরা এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সবাই একযোগে কাজ করছেন যাতে রাজ্যে শান্তি ফিরে আসে এবং এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা যায়।

মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল। কুকি এবং মৈতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে এবং একাধিকবার দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। এই হামলার পর, রাজ্যবাসী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে, সহিংসতার এই নতুন পর্যায়ে হয়তো আরও বড় সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।

এখনও পর্যন্ত, মণিপুরের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কিন্তু এই হামলার প্রভাব রাজ্যের জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। উভয় সম্প্রদায়ের দাবিগুলির মধ্যে সমঝোতা তৈরির জন্য রাজ্য সরকার এবং রাজনৈতিক নেতারা আরও উদ্যোগ নিতে পারে।

এদিকে, হামলার পর যে ৬ জন নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের সন্ধান চালানো হচ্ছে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তাদের সন্ধানে। তবে, মণিপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত জিরিবাম অঞ্চলের ভূখণ্ড এবং জঙ্গলের কারণে উদ্ধারকাজটি কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটি নিঃসন্দেহে মণিপুরের জন্য একটি অন্ধকার সময়, এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই ধরনের সহিংসতা আরো বাড়তে পারে যদি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।