চন্দননগরের (Chandannagar) মধ্যাঞ্চল সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja) কমিটি (committee) শুক্রবার সন্ধ্যায় এক অবাক করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা তাদের মণ্ডপের সমস্ত আলো নিভিয়ে (lights-off) দিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, যা লেজার শো (Laser Show) বন্ধ করার কারণে পুজো কমিটি প্রতিবাদস্বরূপ (Protest) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সপ্তমী সন্ধ্যায় মণ্ডপের সমস্ত আলো বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা হতবাক হয়ে যান।
পুলিশের বক্তব্য, লেজার শো চললে ভিড়ের চাপের কারণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল। পুলিশ প্রশাসন চেয়েছিল, মণ্ডপে কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি না হয়। সেই কারণেই তারা পুজো কমিটিকে লেজার শো বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মণ্ডপের আলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় পুজো কমিটি।
পুজো কমিটির কোষাধক্ষ্য সোমনাথ নন্দী বলেন, ‘‘বিগত তিন বছর ধরে আমরা এই লেজার শো আয়োজন করে আসছি এবং গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসন এই শোয়ের পরিদর্শন করেও কোনো সমস্যা দেখেনি। কিন্তু আজ হঠাৎই চন্দননগর থানার পক্ষ থেকে লেজার শো বন্ধ করার নির্দেশ আসার পর, আমরা প্রতিবাদ হিসেবে সমস্ত আলোকসজ্জা বন্ধ করে দিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘এটি কোনো বিদ্যুৎ বিভ্রাট নয়, এটা আমাদের প্রতিবাদ।’’
তবে, এই আলোর নিভিয়ে দেওয়া নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা গেছে। নৈহাটি থেকে আসা এক দর্শনার্থী রিয়া বর্ধন বলেন, ‘‘এত সুন্দর মাতৃ মূর্তি সামনে রয়েছে, কিন্তু আলো না থাকার কারণে ঠিকভাবে দেখতে পারছি না। সপ্তমীর দিন, মণ্ডপের সামনে আলো না থাকাটা খুব খারাপ লাগছে।’’ তাদের মতে, পুজো ও দেবীর দর্শন উপভোগ করতে আলোর গুরুত্ব অনেক। বিশেষত, লেজার শো মণ্ডপের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, ‘‘লেজার শো-এর জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। গত বছর এই শোয়ের কারণে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, যা পুলিশ দ্রুত সামাল দেয়। তাই জনস্বার্থে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পুজো কমিটির সহযোগিতা প্রয়োজন।’’
এদিকে, চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজো কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘বিষয়টি নজর রাখা হচ্ছে এবং আলোচনা করে ভবিষ্যতে কী করা হবে, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুলিশ ও পুজো কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে যেন নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে পুজো অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মধ্যাঞ্চল সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি গত তিন বছর ধরে যেভাবে লেজার শো আয়োজন করে আসছে, তা তাদের মূল আকর্ষণ ছিল বলে দাবি করেছেন কোষাধক্ষ্য সোমনাথ নন্দী। ‘‘আমাদের মণ্ডপের আলো এবং লেজার শো ছাড়া পুজো প্রাঙ্গণের সাজ-সজ্জা সম্পূর্ণ হতে পারত না। প্রশাসন যদি এতদিন কোনো সমস্যা না দেখে থাকে, তাহলে আজ কেন এই সিদ্ধান্ত?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু আশাকরি প্রশাসন এ নিয়ে আলোচনা করবে এবং পরবর্তী সময়ে এক সমাধানে পৌঁছাবে।’’