পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার উস্তি থানার অন্তর্গত দ্বীপের মোড় এলাকায় ঘটল এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সেখানে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে শুক্রবার রাতে উদ্ধার হয়েছে বিজেপির স্থানীয় নেতার (BJP Leader Murder) রক্তাক্ত দেহ। জানা গেছে, গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই বিজেপি নেতা পৃথ্বীরাজ নস্কর। তিনি মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া সেলের মিডিয়া কনভেনারের দায়িত্বে ছিলেন।
কয়েক বছর আগেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়ে সক্রিয় ভাবে দলের কাজ করতেন বলে জানা গেছে। সেই বিজেপি নেতার নিখোঁজের পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিজেপি নেতার কাছে সব সময় তিনটি ফোন থাকত। রবিবার তাঁর বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে বোনেদের কাছ থেকে ফোঁটাও নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর সোমবার রাতে বাড়ি থেকে বেরোনোর পর আর ফেরেননি। বারবার তাঁর পরিবার তাঁর তিনটি ফোনেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন বেজে যায়। যদিও পরিবারের দাবি, ফোনটি কখনও চালু থাকছিল আবার কখনও বন্ধ করে রাখা হচ্ছিল। এরপর বৃহস্পতিবার উস্তি থানায় পৃথ্বীরাজের পরিবার একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে। সেই ডায়েরি করার পরেরদিন অর্থাৎ শুক্রবার রাতে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে বিজেপি নেতার দেহ পড়ে রয়েছে বলে জানতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় দেহ। তবে এই ঘটনায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে সেই এলাকার তৃণমূল নেতা ইমরান হাসান বলেছেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময়ে ওদের হাতে প্রচুর টাকা এসেছিল। তার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। বিজেপি খুনের রাজনীতি করে।” যদিও এই ঘটনায় পাল্টা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে স্থানীয় বিজেপি নেতা অশোক পুরকাইত।
তিনি বলেছেন, “চক্রান্ত করে এই হত্যা। পৃথ্বীরাজ সক্রিয় বিজেপি কর্মী ছিলেন। এখানকার সংগঠনে তাঁর বড় ভুমিকা ছিল। প্রশাসনের উপর আমাদের কোনও ভরসা নেই। বিজেপি করার অপরাধেই এই খুন।” এর পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিহতের ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “পৃথ্বীরাজ অত্যন্ত নিরীহ ছিলেন। তাঁকে খুন করে দেহ পার্টি অফিসে রেখে যাওয়া হয়েছে। অথবা পার্টি অফিসের মধ্যেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। চারদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।
ওঁর ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেছি। সঠিক তদন্ত চাইছি আমরা। দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। খুনের নেপথ্যে তৃণমূলের হাত থাকতে পারে। পুলিশ কেন ফোনের লোকেশন দেখে ওঁকে খুঁজে বার করতে পারল না? পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ, বিশেষত দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশকে সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ওই এলাকার পুলিশ অপদার্থ হয়ে রয়েছে। পার্টি নিহতের পরিবারের পাশে আছে। আর্থিক সাহায্যও করা হবে।”
অন্যদিকে মৃতের দাদা বলেছেন, “আমি বাড়িতে ছিলাম না। রাতে স্ত্রী আমাকে ফোন করে খবর দেয়, আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। আমি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। কে বা কারা এই কাজ করেছে, আমার জানা নেই। যেখান থেকে ওর দেহ পাওয়া গিয়েছে, সেটি দলীয় কার্যালয় হলেও খুব একটা ব্যবহৃত হত না। বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল ওই ঘরে। আমরা খুনিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
বর্তমানে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করার পাশাপাশি ডায়মন্ডহারবার পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য দেহটি পাঠানো হয়েছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে মৃতের পরিবার। এই বিজেপি নেতাকে কে বা কারা খুন করল? কেন তাঁকে হত্যা করা হল? সেসমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।