মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে (maharashtra assembly elections) রাজনৈতিক বিভিন্ন দল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। আগামী ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের ঝড় তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে, এবং রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নির্বাচনী প্রচার এবং প্রতিশ্রুতিগুলিকে সামনে নিয়ে আসছে। আগামীকাল রবিবার ১০ নভেম্বর ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) নির্বাচনী ইস্তেহার বা ‘সংকল্প পত্র’ (Sankalp Patra) প্রকাশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বিজেপির এই মনিফেস্টো মহারাষ্ট্রের ভোটারদের কাছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে।
এদিকে, কংগ্রেস ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। পাঁচটি প্রধান গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মহিলাদের জন্য মাসিক ৩,০০০ টাকা, মহিলাদের ও মেয়েদের জন্য রাজ্য পরিবহন সেবায় ফ্রি যাতায়াত সুবিধা, কৃষকদের ঋণ মকুব, স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা, যুবকদের জন্য প্রণোদনা ইত্যাদি। এই প্রতিশ্রুতিগুলি কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে নতুন একটি দিক যোগ করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এগুলির বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
কংগ্রেসের পাঁচটি গ্যারান্টি, মহিলাদের জন্য ৩,০০০ টাকা ও কৃষকদের ঋণ মকুব:
কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী পরিকল্পনার আওতায় পাঁচটি গ্যারান্টি ঘোষণা করেছে, যা মহারাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মহিলাদের জন্য ৩,০০০ টাকা মাসিক দেওয়া হবে। মহালক্ষ্মী যোজনার মাধ্যমে মহিলাদের ও মেয়েদের ফ্রি বাস যাতায়াত সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া, কৃষকদের ঋণ মকুব এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের জন্য ৫০,০০০ টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কংগ্রেস আরও জানিয়েছে যে রাজ্যের স্বাস্থ্য খাতে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা সুবিধা এবং যুবকদের জন্য ৪,০০০ টাকা মাসিক অনুদান দেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতিগুলি কংগ্রেসের প্রচারকে জোরালো করেছে, তবে বিজেপি এবং শিব সেনা নেতারা দাবি করেছেন যে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবে বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং আগের নির্বাচনে দেওয়া অনেক প্রতিশ্রুতির মতোই তা হয়তো ফাঁকা প্রতিশ্রুতি হবে।
শিন্ডে-রাহুল বিতর্ক:
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস প্রতিবার নির্বাচনের আগে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে কখনোই সেগুলি পূর্ণ করে না। রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘খাতা খাত’, কিন্তু তারা একবারও তা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা ‘পট পট প্যাট’ দিয়ে কাজ করেছি এবং রাজ্যের উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছি।”শিন্ডের মন্তব্য কংগ্রেসের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা সমালোচনা করা হয়েছে, এবং তারা শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছে।
বরামতী কেন্দ্র, অজিত পওয়ার বনাম যুবেন্দ্র পওয়ার:
মহারাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বরামতী, যেখানে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (NCP) নেতা অজিত পওয়ার তার ভাগ্নে যুবেন্দ্র পওয়ারের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, সেটা রাজনৈতিক মহলে বিশেষ নজর কাড়ছে। এই কেন্দ্রটি পওয়ার পরিবারের গড় হিসেবে পরিচিত, যেখানে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সুপ্রিয়া সুলে এবং সুনেত্রা পওয়ারের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছিল, এবং সুপ্রিয়া সুলে ১.৫ লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এবার, যুবেন্দ্র পওয়ার ও অজিত পওয়ারের মধ্যে গড় কেন্দ্রে একটি অন্যরকম লড়াই দেখা যাবে, যা রাজ্য রাজনীতির গতি-প্রকৃতিকে অনেকটা প্রভাবিত করবে।
মহাযূতি ও মহা-ঐক্য জোটের মধ্যে উত্তেজনাঃ
মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে দুই বড় জোটের মধ্যে লড়াই চলছে। একদিকে রয়েছে শাসক জোট মহাযূতি, যার মধ্যে রয়েছে বিজেপি, শিব সেনা এবং অজিত পওয়ারের নেতৃত্বাধীন NCP। অন্যদিকে, বিরোধী মহা-ঐক্য (MVA) জোট, যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, শিব সেনা (UBT) এবং NCP। মহাযূতি ও মহা-ঐক্য জোটের মধ্যে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে, যেখানে রাজ্যের ক্ষমতা দখল নিয়ে নানা প্রচার চলছে।
বিজেপি, শিব সেনা (UBT), কংগ্রেস এবং NCP একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের নয়, বরং দেশের রাজনীতি নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কেত দিতে পারে।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের দিন ২০ নভেম্বর, এবং ফলাফল ঘোষণা হবে ২৩ নভেম্বর। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১০৫টি আসন পেয়েছিল, শিব সেনা ৫৬টি, এবং কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছিল। এবার নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়েই চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। রাজ্যের ভোটাররা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আগামী নভেম্বরের নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট হবে।