জম্মু ও কাশ্মীরের কিশতওয়ারে বৃহস্পতিবার দুই গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটির (VDC) সদস্যকে অপহরণ করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা (J&K Terror Attack)। স্থানীয় প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, নিহতদের নাম নাজির আহমেদ এবং কুলদীপ কুমার। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং হত্যাকারীদের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটি (VDC) হল এমন একটি বাহিনী যা জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রান্তিক এবং দুর্গম এলাকার স্থানীয় জনগণকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তাদের পরিবারকে রক্ষায় প্রস্তুত করতে গঠন করা হয়। প্রথম দিকে VDC সদস্যদের .303 রাইফেল দেওয়া হলেও এখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাদের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। পুঞ্চ, রাজৌরি, কিশতওয়ার, ডোডা, কাঠুয়া এবং উদমপুর জেলার দুর্গম এলাকাগুলোর মধ্যে যেখানে জঙ্গিরা VDC সদস্যদের নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ও কান হিসেবে বিবেচনা করে, সেখানে তারা জঙ্গিদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
এই কারণে VDC সদস্যরা প্রায়ই জঙ্গিদের প্রথম শিকার হন। কিশতওয়ার জেলার যে অঞ্চলে বৃহস্পতিবার হামলাটি ঘটেছে, সেখানে জঙ্গিদের একটি বিদেশি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে, যারা ওই অঞ্চলে একাধিক হামলা ও গুলির লড়াইয়ের জন্য দায়ী। এসব জঙ্গি গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিরাপত্তা বাহিনী আধুনিক কৌশল অবলম্বন করছে এবং গত কয়েক সপ্তাহে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কৌশলগতভাবে নিজেদের অভিযানগুলোর ওপর নিরীক্ষণ বাড়ানো হয়েছে।
VDC সদস্যদের হত্যা এবং এসব হামলা অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে যখন এসব হামলা সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ জীবনের ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করবে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে VDC সদস্যরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
এই ধরণের আক্রমণ সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করতে পারে, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে এধরণের হামলার পরও তারা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে দমন করার জন্য আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কয়েকদিন আগে কিশতওয়ার ও রাজৌরি অঞ্চলে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছিল, যেখানে প্রশিক্ষিত প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে যোগ দেয় পাহাড়ি যুদ্ধের বিশেষজ্ঞ বাহিনী।
তবে জঙ্গিরা সাধারণত ছদ্মবেশে এই হামলা চালায় এবং গোয়েন্দা সূত্রে ধারণা করা হচ্ছে যে, জঙ্গি সংগঠনগুলির স্থানীয় সহযোগীরা বা “অভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার” (OGWs) তাদেরকে লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করছে। এই গোষ্ঠীগুলির হামলার প্রধান উদ্দেশ্য হল নিরাপত্তা বাহিনীর সজাগ অবস্থাকে বিপর্যস্ত করা এবং স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা।
নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই তাদের কৌশল পুনর্বিন্যাস করেছে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে পরিচালিত কার্যক্রমের জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করেছে। গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন যে, হামলাকারী জঙ্গিরা এখন পূর্বের তুলনায় অনেক কম কার্যকর হয়ে পড়েছে, কারণ নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের সঞ্চালন ক্ষমতা সীমিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারণ কিশতওয়ার জেলার মতো অঞ্চলগুলিতে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জেলা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হত্যাকারীদের সন্ধানে প্রচুর সংখ্যক বাহিনীকে মিশ্রিত অভিযান চালানোর জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের হামলা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনী সক্রিয়ভাবে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে মরিয়া। জঙ্গি হামলা এবং অব্যাহত উত্তেজনা কাশ্মীরের নাগরিক জীবনকে কঠিন করে তুলছে, এবং প্রতিদিনের নিরাপত্তা সঙ্কট আরো গভীর হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং জঙ্গি হামলা ও অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সকলকে নিরাপদ থাকার জন্য সক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছে।