মৌলবাদ ইস্যুতে বামপন্থীদের আক্রমণ তসলিমা নাসরিনের

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামিক শাসন এবং মৌলবাদের প্রভাব নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত…

Taslima Nasrin

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামিক শাসন এবং মৌলবাদের প্রভাব নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং তার পেছনে প্রধান কারণ ইসলামিক শাসকদের প্রভাব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে তসলিমা নাসরিন একের পর এক প্রশ্নের মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলেছেন যে, ইসলামিক শাসকগোষ্ঠীর প্রভাবে রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের এই করুণ পরিণতির পেছনে কী আছে?—ইসলাম।” তসলিমার দাবি, ইসলামী শাসকরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে ইসলামকে ঢুকিয়ে দিয়ে সমাজকে ইসলামী আদর্শে আবদ্ধ করেছে। তসলিমার মতে, “রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্রে ইসলাম এনে সমাজকে ইসলামে মুড়িয়ে, শিক্ষাকে ইসলামে ডুবিয়ে দেশটি ধ্বংস করা হয়েছে।” তিনি মনে করেন, ইসলামের মাধ্যমে মানুষদের মগজ ধোলাই হয় এবং এর থেকে ইসলামী সন্ত্রাসী তৈরি হয়।

   

ইসলাম বনাম চরম ডানপন্থা নিয়ে তসলিমার মতামত
তসলিমা নাসরিন আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চরম ডানপন্থী দলগুলো ক্ষমতায় আসছে। এর জন্য অনেক মানুষই চরম ডানপন্থাকে ইসলামের বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছে, মনে করে যে ডানপন্থার মাধ্যমে ইসলামের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তসলিমার দাবি, বামপন্থীরা ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় চরম ডানপন্থীরা সুবিধা পাচ্ছে। তিনি বলেন, “বামপন্থীরা ইসলামকে ডিফেন্ড না করলে চরম ডানপন্থাই জিতবে।”

তসলিমার মতে, ইসলাম এবং চরম ডানপন্থা—দুটোই খারাপ এবং ক্ষতিকর। তবে, বর্তমানে মানুষ এক খারাপকে দিয়ে আরেক খারাপকে দূর করতে চাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং মুক্ত চিন্তার প্রসারের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষিত এবং সভ্য করলে ধর্মের প্রভাব কমে যাবে। তবে তিনি পরিষ্কার করে জানান, তিনি চরম ডানপন্থাকে সমর্থন করেন না।

বামপন্থা নিয়ে তসলিমার কঠোর সমালোচনা
বামপন্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তসলিমার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। তিনি মনে করেন, নারীবিরোধী ইসলামিক আদর্শকে সমর্থন করে বামপন্থী আদর্শ তার সঠিক পথ হারিয়েছে এবং এর ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার। তসলিমার মতে, বামপন্থা এখন আদর্শ থেকে সরে গিয়ে ইসলামের পাশে দাঁড়াচ্ছে, যা এই মতাদর্শের পতন ঘটাতে বাধ্য।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও ইসলামের প্রভাব নিয়ে তসলিমার মতামত
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের মন্তব্যেও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মনে করেন, ইসলামের প্রভাব কমানো গেলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে। তার মতে, ইসলামের আসক্তি দূর করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং দুর্নীতি দূর করতে হবে।

তসলিমা নাসরিনের এসব মন্তব্য ইতোমধ্যেই অনেকের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। কেউ তার বক্তব্যের সাথে একমত হয়েছেন, আবার কেউ মনে করছেন তার মন্তব্য অতিরিক্ত বিতর্কিত এবং বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে, তসলিমার মতে, মুক্ত চিন্তা এবং বিজ্ঞানমনস্কতা ছড়ালে সমাজ থেকে ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করা সম্ভব হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে তসলিমার বিতর্কিত অবস্থান
তসলিমা নাসরিনের এই বিতর্কিত অবস্থান এবং বক্তব্য তার স্বভাবজাত চিন্তাধারা প্রতিফলিত করে, যেখানে তিনি সর্বদা মুক্তচিন্তার পক্ষপাতী। তার মতে, বামপন্থীরা নারীবিরোধী ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের ভারসাম্য হারিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে চরম ডানপন্থার উত্থান হয়েছে। তার এই বিবৃতির পর নতুন করে মৌলবাদ এবং চরমপন্থা নিয়ে দেশে বিদেশে আলোচনা তৈরি হতে পারে।