কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম (Work-from-Home) বা বাড়ি থেকে কাজের প্রবণতা বাড়লেও সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা (Employee Wellness Survey) বলছে, বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য উদ্বেগজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাপিয়েন্স ল্যাবের করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে অফিস থেকে কাজ করা কর্মীদের তুলনায় বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীরা মানসিক অস্থিরতায় বেশি ভুগছেন।
বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীদের মানসিক অস্থিরতার মাত্রা বেশি
সাপিয়েন্স ল্যাবের মতে, বাড়ি থেকে কাজের কারণে অনেক কর্মী নিজেকে বিচ্ছিন্ন অনুভব করছেন। কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভাবে সামাজিক সংযোগ কমে যাচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা বাড়ছে। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, কাজ ও ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, পরিবারিক চাপে পড়ে মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়া, এসবই বাড়িয়ে দিচ্ছে মানসিক অস্থিরতা।
অফিসে কাজ করলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অফিস থেকে কাজ করলে কর্মীরা সহকর্মীদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অফিসের একটি নিয়মিত সময়সূচির মধ্যে কাজ করার সুযোগ তাদের জীবনে ভারসাম্য আনে। অফিসের পরিবেশের মধ্যে থাকা কর্মীরা মানসিক চাপ কম অনুভব করেন, কারণ সামাজিক সংযোগ তাদের একঘেয়েমি কমায়। এছাড়াও, অফিসে কাজ করার ফলে কর্মীরা বাড়ির পরিবেশ থেকে আলাদা থেকে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ি থেকে কাজ করার সময় কর্মীরা শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকেন, যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীরা যদি নিয়মিত বিরতিতে হাঁটাহাঁটি এবং ব্যায়াম করেন, তবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কর্মক্ষেত্রে ফেরা কি মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করবে। নিয়মিত কাজের সময়সূচি, সহকর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, সামাজিক সংযোগ এবং কাজের পরিবেশ কর্মীদের মানসিক চাপ হ্রাস করবে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অফিস থেকে কাজ করানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যাতে কর্মীরা মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে পারেন।
সাপিয়েন্স ল্যাবের সুপারিশ
সাপিয়েন্স ল্যাবের মতে, বাড়ি থেকে কাজ করতে হলে কর্মীদের একটি সুষম রুটিন তৈরি করা উচিত, যাতে কাজের সময় এবং বিশ্রামের সময়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা যায়। পাশাপাশি, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং সামাজিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য ভার্চুয়াল মিটিং-এরও ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ওয়ার্ক ফ্রম হোম সুবিধা কর্মীদের জন্য কিছুটা সময়োপযোগী হলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক। তাই বাড়ি থেকে কাজ করা কর্মীদের উচিত নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও সতর্ক হওয়া।