ঘুর্ণিঝড় দানার মোকাবিলায় ৫ রাজ্যে ৫৬টি এনডিআরএফটিম মোতায়েন

Cyclone Dana Live Updates: ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সাইক্লোন দানা। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ অক্টোবর রাতে বা ২৫ অক্টোবর ভোরে পুরি থেকে…

NDRF Deploys 56 Teams Across Five States for Rescue Operations

Cyclone Dana Live Updates: ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সাইক্লোন দানা। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ অক্টোবর রাতে বা ২৫ অক্টোবর ভোরে পুরি থেকে সাগরদ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের সর্বাধিক গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই প্রশাসন সর্তকতা গ্রহণ করেছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) পাঁচটি রাজ্যে ৫৬টি দল মোতায়েন করেছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের (IMD) ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, সাইক্লোন দানা ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত উপকূলের একাংশকে প্রভাবিত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি মূলত ওড়িশার উপরেই বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে ওড়িশা সরকার ১৪টি জেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, ৮০০টি স্থায়ী সাইক্লোন আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে, এবং আরও ৫০০টি অস্থায়ী শিবির স্কুল-কলেজে খোলা হয়েছে।

   

ওড়িশায় সর্তকতা ও প্রস্তুতি
ওড়িশার রাজস্ব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরেশ পুজারি জানিয়েছেন, ২৫০টি ত্রাণ কেন্দ্রের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এইসব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য, জল, ওষুধ এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। ওড়িশা জুড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি যৌথভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। এনডিআরএফ, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনও একসঙ্গে কাজ করছে এই সংকটের মোকাবিলায়।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
পশ্চিমবঙ্গেও সাইক্লোন দানার আগমনের আগে প্রচুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৯টি জেলার সব স্কুল, কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। উপকূলবর্তী এলাকা এবং নিচু জমিতে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সব জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েত সংস্থাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

উপকূল রক্ষী বাহিনীর পদক্ষেপ
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীও পুরোপুরি সতর্ক রয়েছে। উপকূল এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে হেলিকপ্টার এবং দূরবর্তী স্টেশনগুলো থেকে সমুদ্রযাত্রীদের জন্য সচেতনতা বার্তা ও আবহাওয়ার সতর্কতা অবিরাম সম্প্রচার করা হচ্ছে। তটরক্ষী বাহিনীও স্থানীয় সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাইক্লোন দানার প্রভাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

মৎস্যজীবীদের জন্য সর্তকবার্তা
মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে সমুদ্রে রয়েছেন, তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে এবং তটরক্ষী বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলি সমুদ্রতট এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছে।

উপকূলীয় জেলায় প্রস্তুতির নির্দেশ
পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলীয় এলাকায় প্রশাসনকে বিশেষ সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। সাইক্লোনের সর্বাধিক প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরসহ পুরি থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিদ্যুৎ দপ্তর।

প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরবর্তী প্রভাব
২৩ অক্টোবর থেকেই কলকাতা এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়ের আগে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যা এবং বাড়িঘর ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকায়, নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে পরিবহন ব্যবস্থাও ব্যাহত হতে পারে।

সরকারি পরামর্শ ও সতর্কতা
সরকারি দপ্তরগুলি বারবার জনসাধারণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। বিশেষভাবে নিচু অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের প্রতি এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।