আর জি কর আন্দোলনকারীদের অনশন চলছে, সরকারের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায়

শনিবারের বারবেলায় মুখোমুখি বসার বার্তা দিয়ে ফোন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যেবেলায় মুখ্যসচিব (সিএস) আন্দোলনকারীদের (Hunger Strike Protest)একটি ইমেল পাঠান, যার ভিত্তিতে রবিবার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে…

ddgggjjj আর জি কর আন্দোলনকারীদের অনশন চলছে, সরকারের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায়

শনিবারের বারবেলায় মুখোমুখি বসার বার্তা দিয়ে ফোন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যেবেলায় মুখ্যসচিব (সিএস) আন্দোলনকারীদের (Hunger Strike Protest)একটি ইমেল পাঠান, যার ভিত্তিতে রবিবার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে এক জরুরি জিবি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আর রবিবাসরীয় এই জীবির শেষে যা ফলাফল বের হলো তাতে জটিলতা আরো বাড়লো বই কমলো না।

কারণ মুখ্যমন্ত্রী বা মুখ্য সচিবের মূল শর্তই ছিল অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনার টেবিলে আসা। কিন্তু অনশন প্রত্যাহার করার আহ্বান বা শর্ত কার্যত নাকচ করে দিয়েছেন জুনিয়ার ডক্টরস ফ্রন্ট এর সদস্যরা। উল্টে আরো একধাপ এগিয়ে সুর চড়িয়েছেন তারা। যাতে নবান্নের সোমবারের বৈকালিক মিটিং নিয়ে এখন সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হল বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

   

মিটিং শেষে আন্দোলনকারীদের(Hunger Strike Protest) পক্ষে দেবাশিস হালদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।

১৪ দিনের অনশন এবং ৭০ দিনের আন্দোলন
আর জি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত তিনজন কর্মী গত ১৪ দিন ধরে অনশন করছেন। তাদের দাবি ১০ দফা নিয়ে সরকারের কাছ থেকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে তারা অনশন চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এতদিনে সরকার স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ৭০-৭১ দিন পরও আমাদের দাবি নিয়ে সরকারের আচরণ ধোঁয়াশার। এমনকি, কখনো মনে হয় তারা জানেন না বা জানার ইচ্ছা নেই।”

সরকারের ইমেল এবং জিবি মিটিং
শনিবার মুখ্যসচিবের পাঠানো ইমেল নিয়ে রবিবার এনআরএস জিবি মিটিংয়ে আলোচনা হয়। এই ইমেল প্রসঙ্গে দেবাশিস হালদার বলেন, “সিএসের প্রতুত্তর মেল তৈরি হয়েছে প্যান জিবি থেকে। তারা উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে আমরা যে পরিমাণ কষ্টে আছি, সেই পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারের দায়িত্ব আমাদের দিকেই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা আমরা ধিক্কার জানাই।”

তিনি আরও জানান যে, সরকারের টাইমলাইন অনুযায়ী তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে রাজি আছেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয়, তবে মঙ্গলবারের মতো বৃহত্তর স্বাস্থ্য ধর্মঘটের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সোমবারের কর্মসূচি এবং অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
দেবাশিস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, অনশনকারীরা তাদের দাবি থেকে পিছু হটবেন না। সোমবার স্বাস্থ্য দফতরগুলোর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকার যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তবে অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন আন্দোলনকারীরা।

তিনি বলেন, “আমাদের সহযোদ্ধারা অনশনক্লিষ্ট, এবং আমরা তাদের দুর্দশার সাক্ষী হচ্ছি। সরকারের প্রতিক্রিয়ায় আমরা সন্তুষ্ট নই। তবুও, আমরা আলোচনায় যাবো, তবে অনশন না তুলেই। আন্দোলনকারীরা চান যে, আরেকটু সময় দেওয়া হোক, এবং তারা আরো দু’দিন না খেয়ে অনশন চালিয়ে যেতে রাজি আছেন।”

সিপি ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সরানোর প্রসঙ্গ
দেবাশিস হালদার আরো একবার স্পষ্ট করেছেন যে, সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ—যেমন সিপি সরানো বা কিছু স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সরানো—আন্দোলনকারীদের দাবির ভিত্তিতে নয়, বরং এগুলো প্রশাসনিক পরিবর্তনের অংশ। আন্দোলনকারীদের কোনো ‘জেদ’ থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এই ধারণাকে তিনি সম্পূর্ণভাবে খারিজ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের জেদের জন্য সরকার পদক্ষেপ করেছে, এটা সঠিক নয়। আমরা কোনো বালখিল্য জেদ করে এইসব দাবি করছি না।”

আলোচনার প্রতীক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আন্দোলনকারীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে তারা স্পষ্ট করেছেন যে, আলোচনা চলাকালীন অনশন বন্ধ হবে না। দেবাশিস হালদার আশা প্রকাশ করেছেন যে, সোমবারের ঘেরাও কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এবং তারপরে আলোচনা থেকে ফলপ্রসূ কিছু বেরিয়ে আসবে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, আন্দোলনের দাবিগুলো যদি যথাযথভাবে পূরণ না হয়, তবে পরিস্থিতি আরও তীব্র হতে পারে।

আর জি কর কাণ্ড নিয়ে এই আন্দোলন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু গভীর সমস্যাকে সামনে এনেছে। এই আন্দোলন কেবলমাত্র একটি হাসপাতালের সংকট নয়, এটি সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোকে স্পষ্ট করে তুলেছে। আন্দোলনকারীরা সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন, এবং সামনের দিনগুলিতে এই আন্দোলন কতদূর যাবে তা এখন দেখার বিষয়।