নবান্ন আগলাতে গিয়ে কার্যত দৃষ্টি শক্তি হারাতে বসেছেন কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট (Kolkata Police Sergean)। শুধু এই সার্জেন্ট নয় এরকম প্রায় ২৫ জন কলকাতা পুলিশের আধিকারিক এবং কর্মী এই মুহূর্তে হসপিটালে ভর্তি রয়েছেন বলে সূত্র মারফত খবর পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল হাওড়া এবং হাওড়া সংলগ্ন গঙ্গার এপারের কলকাতার একাধিক অংশ। আন্দোলনকারী ‘ছাত্রদের’ মারমুখী প্রতিরোধের ফলে বহু নিরাপত্তারক্ষী এবং আধিকারিক আহত বলেই দাবি করছে কলকাতা পুলিশ।
এদিন সকাল থেকে কার্যত নিশ্চিদ্র দুর্গে পরিণত হয় নবান্ন সংলগ্ন এলাকা। ওয়েল্ডিং করে ব্যারিকেড থেকে শুরু করে রাস্তায় কংক্রিটের ঢালাই করে লোহার গার্ডরেল বসানো, সবকিছুই করা হয়েছিল। প্রথম দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও, ব্যারিকেডের বাধা পেয়ে মারমুখী হয়ে যায় জনতা এমনটাই দাবি পুলিশ কর্তৃপক্ষের। সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, হাওড়া ব্রিজ, প্রিন্সেপ ঘাটের মতো এলাকাগুলিতে আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়।
পুলিশের তরফ থেকে জলকামান টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জের পাল্টা দিতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরাও। ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের ইট বৃষ্টি লাঠি ছুঁড়ে মারা শুরু হয় পুলিশের দিকে। পুলিশের ছোঁড়া কাদানে গ্যাসে বহু আন্দোলনকারী আহত বলেও দাবি করা হচ্ছে।
সেরকমই আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে মাথা ফেটেছে একাধিক পুলিশ কর্মীর। কলকাতার হেস্টিংসে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট দেবাশীষ চক্রবর্তী। ভিড়ের মধ্যে থেকে ছুটে আসা ইট লাগে তাঁর বাঁ চোখে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এসএসকেএম-এ নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারপরেও আহত চোখ দিয়ে ঠিকঠাক মতো দেখতে পারছেন না দেবাশীষবাবু। যার ফলে তাঁর বাঁ চোখের দৃষ্টি হারাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডাক্তাররা। আপাতত তাঁকে যুদ্ধকালীন তৎপরতাতে একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৪ই আগস্টের রাতে বাগুইআটিতে কর্তব্যরত মহিলা পুলিশ কর্মীর কথা। স্বাধীনতা দিবসের মহিলাদের মধ্যরাত্রে রাত দখলের কর্মসূচির মধ্যেই আহত হয়েছিলেন মহিলা কনস্টেবল শম্পা প্রামাণিক। বাগুইআটিতে মিছিল চলাকালীন উন্মত্ত জনতার ভিড় থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে চোখে এবং মুখে ভয়ংকর আঘাত পান এই মহিলা কনস্টেবল।
সেই ঘটনা ১৩ দিন পরে আবারও একই ছবির পুনরাবৃত্তি। তবে শুধু সার্জেন্ট দেবাশীষ বাবু নন, আনন্দপুর থানার ওসি সুমন কুমার দে সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক ভালো রকমের আহত হয়েছেন আজকের এই ঘটনায়। প্রিন্সেপ ঘাটের উন্মত্ত আন্দোলনকারীদের আক্রমণে আহত হন আনন্দপুর থানার ওসির সুমন বাবু। তাদের সকলকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েন নিজে হসপিটালে আহত সহকর্মীদের দেখবার জন্য ছুটে গিয়েছেন।
অপরদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই বিষয়ে তাঁদের দলের রাজনৈতিক অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। যে সমস্ত আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বা যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সবাইকে আইনি এবং হসপিটালে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করার ঘোষণা করেছেন তিনি। অপরদিকে কলকাতা পুলিশ এখন অবধি আজ গোটা দিনে প্রায় ২০০-এরও বেশি আন্দোলনকারীকে আটক করেছে বলে সূত্রের খবর।
শুধু তাই নয়, একাধিক ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি প্রকাশ করে রীতিমতো আন্দোলনকারীদের হুলিয়া জারি করা হয়েছে। পুলিশের উপরে আক্রমণ, শান্তি-শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং সরকারী সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত সমস্ত ছবি পোস্ট করে তাদের পরিচয় জানাতে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে তাঁরা বাকি দোষীদেরও খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, আজকের এই আন্দোলনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হিংসা ছড়াবার চেষ্টার একাধিক নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। আগামী দিনে সেই প্রমাণও তাঁরা একে একে জনসমক্ষে হাজির করবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের এই পদস্থ কর্তা।