নবান্ন অভিযান ঠেকাতে হাওড়া ব্রিজসহ পাঁচ জায়গায় যুদ্ধ সমান সুরক্ষা বলয়

আর জি কর মেডিকাল কলেজে হাসপাতলে এক শিক্ষানবিশ মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের (Nabanna Obhijaan) ডাক…

আর জি কর মেডিকাল কলেজে হাসপাতলে এক শিক্ষানবিশ মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের (Nabanna Obhijaan) ডাক দিয়েছে। সেই কারণে মঙ্গলবার কলকাতা ও হাওড়া থেকে নবান্নর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে একাধিক মিছিল। লালবাজার সূত্রে খবর এই মিচিলগুলিকে আটকাতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদ্ধক্ষেপ। এই দায়িত্বে থাকবেন ৫ জন উপ-নগরপাল পদমর্যাদার অফিসার।

কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ? জানা গিয়েছে যে হওয়ার সেতুর যে কলকাতার অংশটি রয়েছে সেখানে পাঁচ জায়গায় বসানো হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল এবং কাঠের সিজার ব্যারিকেড । হাওড়ায় নবান্নের দিকে যাওয়ার পথে চার জায়গায় লোহার ব্যারিকেড বসিয়ে দিয়েছেন পুলিশ। এই ব্যারিকেডগুলিকে লোহার পাইপের সঙ্গে বেঁধে আটকে দেওয়া হয়েছে রাস্তায় খোঁড়া গর্তে। এতে আশা করা হচ্ছে যে বিক্ষোভকারীরা ধাক্কা দিলেও উপড়ে জানবে না ব্যারিকেড।

   

নবান্ন অভিযানের কারণে আজ সমস্যায় পড়তে পারেন হাওড়া থেকে কলকাতায় আসা যাত্রীরা। এছাড়া ইউ জিসি নেট পরীক্ষাও রয়েছে। তবে পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন এবং যাত্রীদের যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

অভিযানের আগেই দুর্গে পরিণত হল নবান্ন, মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী, ড্রোন

হাওড়ার দিক থেকে কলকাতায় যে সব যাত্রীরা আসছেন তাঁদের মূলত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং গঙ্গায় ফেরি পরিষেবা ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। রিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন যে যতক্ষণ না নির্দিষ্ঠ রাস্তাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়, বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে বাস পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন নিত্যযাত্রীরা। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে মঙ্গলবার করুণাময়ী থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার উদ্যেশে রওয়ানা দেবে বাস। এই বাসগুলি ফিরতি পথে নিবেদিতা সেতু দিয়ে কলকাতায় ফিরবে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে কলকাতায় কলেজ স্কোয়ার শিয়ালদহ স্টেশন এবং শহরের বিভিন্ন জায়গা, মহাত্মা গান্ধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে যেখান দিয়ে হাওড়া সেতু ধরে নবান্নের দিকে যাওয়া যায় সেই সব জায়গায় মিছিলগুলোকে আটকাবেন তাঁরা। এই মিছিলগুলোকে আটকাতেই এই জায়গায় বসানো হয়েছে লোহার গার্ডরেল এবং সিজার ব্যারিকেড। অন্যদিকে হাওড়া সেতুতে ওঠার মুখেও বসানো হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যারিকেড এবং কাঠের গুঁড়ি।

পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়ার সঙ্গে কলকাতার সংযোগকারী বিভিন্ন রাস্তা যেমন বিদ্যাসাগর সেতুতে মিছিল পুচ আটকাতে, সেখানেও রাখা হয়েছে ব্যারিকেড। এই কারণে টার্ফ ভিউ রোড, হেস্টিংস মাজার, ফারলং গেট ও খিদিরপুর রোদে বসানো হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল। এছাড়াও প্রতিবাদীরা যাতে বেশি দূর না এগোয় সেই উদ্দেশে রাখা হচ্ছে পাঁচটি জলকামান। এছাড়া পাঁচ জায়গায় রাখা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনী। আজ ড্রোন নজরদারিও চালাচ্ছে পুলিশ।

মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে হওয়ার সুরক্ষা বিশেষভাবে নিশ্চিত করতে রাখা হচ্ছে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড । এই ব্যারিকেড থাকছে চার জায়গায় যেগুলি হল, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি সেতুর গ্যারাজ মোড়, আন্দুল রোডের লক্ষ্মীনারায়ণতলা, ফোরশোর রোড ও রামকৃষ্ণপুর লঞ্চঘাটমুখী রাস্তার সংযোগস্থল এবং জিটি রোডের বঙ্গবাসী মোড় এবং মল্লিকফটকের সংযোগস্থল। এছাড়াও হাওড়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দু’হাজারের বেশী পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে রাখা হয়েছে ১০০টি অতিরিক্ত ক্যামেরা। আজ বেলা ১১টার পর থেকে সমস্ত রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ।

মিছিল সম্পর্কে কলকাতা পুলিশের তরফে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য চাওয়া হলে তাদের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। তথ্য না পেলেও সোমবার হাওড়া শরৎ সদনে এডিজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) সিসরাম ঝাঝারিয়ার নেতৃত্বে বৈঠক করে পুলিশ। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ রাজ্য পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। অভিযানটিকে মোকাবিলা করতে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট ও জেলা থেকে অতিরিক্ত বাহিনী এনেছে পুলিশ।

আজ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসছে পুলিশ প্রহরা। এগুলি হল, বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, রানিহাটি-সহ গ্রামীণ হাওড়ায় মুম্বই রোডের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা । গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া জানিয়েছেন যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের যা যা করণীয়, সব পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা।