মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে হেফাজতে পেতে মরিয়া ছিল ভারত। ওই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী জঙ্গিকে ভারতের হতে তুলে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আরজি জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। সেই আবেদনেই স্বস্তির খবর। ইউএস কোর্ট অফ আপিল ফর নাইনথ সার্কিট রায় দিয়েছে যে, দুই দেশের চুক্তি মোতাবেক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার ব্যবসায়ী তাহাউর রানা ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য। ফলে তাঁকে সে দেশে বিচারের জন্য পাঠাতে কোনও বাধা নেই।
২৬/১১ কাণ্ডের অন্যতম চক্রী কানাডার নাগরিক রানা এখন আমেরিকায় জেলে বন্দি। মুম্বাইয়ে হওয়া ওই ভয়াবহ হামলায় ছয় মার্কিন নাগরিকেরও মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় আমেরিকার আদালত। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
কিন্তু ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদনে খুনের মামলায ফের তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছর ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই ও এএফপি জানিয়েছিল যে, কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ রানাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র হাতে তুলে দিতে পারে আমেরিকা। তাকে হাতে পেলে এটা হবে ভারতের ‘প্রাইজ ক্যাচ’। ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী রানার অপরাধ কোনওভাবেই জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি নেতা মাসুদ আজহার, হিজবুল নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন এবং লস্কর-ই-তইবার নেতা হাফিজ সইদের থেকে কম নয়। জানা গিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলসের ফেডারেল কোর্টে রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
ভারত ও হাসিনার ঘনিষ্ঠ অভিযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সরালেন ড. ইউনূস
উল্লেখ্য, ২৬/১১ কাণ্ডে আরেক ষড়যন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির সঙ্গে রানার দুর্দান্ত বোঝাপড়া ছিল। হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত কার্টুন ছাপায় ২০০৮ সালে ডেনমার্কের সংবাদপত্র অফিস ‘জিল্যান্ডস পস্টেন’-এর দপ্তরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে দু’জনকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ। তাদের টানা জেরা করার সময় তাদের কথার সূত্র ধরেই মুম্বই হামলায় রানার জড়িত থাকার ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানি চর হিসাবে রানা ২৬/১১ কাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। আজমল কাসভদের হামলাকে কার্যকর করতে তিলে তিলে নিখুঁত ছক কষেছিল সে। আদতে সে ছিল পাক সেনায় কর্মরত একজন চিকিৎসক। পরে কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে বাস করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সে ছিল ‘বেসরকারিভাবে’ নিযুক্ত আইএসআইয়ের একজন বিশ্বস্ত চর। অর্থাৎ বেতনভুক না হলেও সব রকমের সুবিধা ও মদত সে চাইলেই আইএসআই থেকে পেত।
জেরা চলাকালীন মুম্বই হামলার সঙ্গে রানার যোগ ধরা পড়ে। জানা যায়, হেডলির সঙ্গে মুম্বইয়ে একটি ভুয়ো অভিবাসন দপ্তর খুলেছিল সে। মানুষকে কানাডা ও আমেরিকার ভিসা পাইয়ে দেওয়ার আড়ালে গুপ্তচর নিয়োগ করে ভারতে হামলার ছক কষছিল তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই আগেই জানিয়েছে, শুধু হেডলি নয়, হামলার আগে মুম্বইয়ে ঘুরে গিয়েছিল রানাও। তাজ হোটেলেই উঠেছিল সে। রানা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে। উল্টে দাবি করে, ভিসার কাজেই মুম্বইয়ে সস্ত্রীক এসেছিল সে। ইচ্ছাকৃতভাবে হেডলি তাকে ফাঁসাচ্ছে বলেও রানাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল তার পরিবার।