সুযোগ দিলেন না চিকিৎসকদের। চলে গিয়েছেন সুভাষ ভৌমিক। ময়দানের ‘ভোম্বলদা’ (Subhash Bhowmick)। এসেছিলেন রাজার মতো। বিদায়বেলাতেও তাই। তিনিই ‘ভোম্বল সর্দার’।
শনিবার সকাল থেকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ময়দান জুড়ে। আকাশের মুখ ভার। বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে কলকাতার রাস্তাঘাট। সিক্ত অগুনতি ক্রীড়া প্রেমীদের দুই চোখ।
ময়দানের গোলমেশিন ছিলেন তিনি। প্রদীপ ব্যানার্জীর স্নেহচ্ছায়ায় নিজেকে ফিরে পেয়েছিলেন নতুন করে। ফুটবলার হিসেবে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কোচ হিসেবে সফল। ইস্টবেঙ্গলকে পৌঁছে দিয়েছিলেন সাফল্যের শিখরে। আশিয়ান ট্রফি তাঁর ঝুলিতে। অসুস্থ শরীরেও মজে ছিলেন ফুটবলে। যুক্ত ছিলেন কোচিং-এর সঙ্গে। অতিমারি আবহে রপ্ত করেছিলেন অনলাইন মাধ্যমে। আইএসএল-এ কথা বলেছিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গে। বরাবরের মতো সুভাষ তখনও কথা বলেছেন কোনো রাখঢাক না রেখে।
প্রদীপ ব্যানার্জীর মতো সুভাষ ভৌমিকের পেপটকও এক সময় ধ্বনিত হতো ড্রেসিং রুমে। সালগাওকর, চার্চিল ব্রাদার্স হোক কিংবা ইস্টবেঙ্গল। বিপদে পড়লেই আগে ডাক পড়েছে ভোম্বলদার৷ যখন প্রত্যাশিত ফল করতে পারেননি, তখন সহ্য করেছেন ময়দানের আবেগকে, রোষকে। কিন্তু তিনি পালিয়ে যাননি। কারণ তিনি বুঝতেন ফুটবলের আবেগকে।
সেরা ফর্মে থাকার সময় বুলডোজার চালিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুর্গে। ভারতের হয়ে রয়েছে হ্যাটট্রিক। ১৯৬৭ সালে ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে৷ স্ট্রাইকার হিসেবে সুভাষ ভৌমিকের পরিসংখ্যান যে কোনো তারকার কাছে ঈর্ষণীয়। খেলেছিলেন মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলে। মোহনবাগানে খেলেছিলেন দুই দফায়, ইস্টবেঙ্গলে তিন দফায়। লাল-হলুদ জার্সিতে খেলেছিলেন ২১৩ টি ম্যাচ। করেছিলেন ১৬৫ টি। সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলেছিলেন ৯০ টি ম্যাচ। গোল করেছিলেন ৮৫ টি। ভারতের হয়ে জাতীয় দলে ৬৯ ম্যাচে করেছিলেন ৫০ টি গোল।
বিদেশি কোচেদের হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখে বারংবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সওয়াল করেছেন স্বদেশীদের হয়ে। ভারতীয় ফুটবলকে চিনতেন হাতের তালুর মতো। প্রতিদ্বন্দিতা ভুলে তাঁকে সুস্থ করে তুলতে এক মেরুতে এসেছিল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল। এক সুতোয় বেঁধে দিয়ে গেলেন কলকাতা ফুটবলকে। তিনিই পারেন। কারণ তিনি ‘ভোম্বল সর্দার’।