Bangladesh: আন্দোলনের অরাজকতায় বাংলাদেশের ‘লক্ষ্মী’ মুখ ফিরিয়ে ভারতের কোম্পানিতে?

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের প্রভাবে সেদেশের (Bangladesh) ব্যবসা জগতে যেন অমাবস্যার আঁধার নেমেছে। শেখ হাসিনার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পও আপাতত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একটা সময়…

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের প্রভাবে সেদেশের (Bangladesh) ব্যবসা জগতে যেন অমাবস্যার আঁধার নেমেছে। শেখ হাসিনার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পও আপাতত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একটা সময় ছিল যখন ভারতের গুজরাতকে বলা হত প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার।

৪০ এবং ৫০-এর দশকে ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে বস্ত্র শিল্পের রমরমা তুঙ্গে উঠেছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের গুজরাত একইভাবে বস্ত্র শিল্পে মারাত্মক উন্নতি করে। কিন্তু হাসিনার শাসনকালেই  বাংলাদেশ কার্যত ভারতকে টেক্কা দিয়ে বস্ত্রশিল্পের উন্নতিতে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভই হল এই বস্ত্র শিল্প।

   

শেখ হাসিনার সময়কালে এই বস্ত্র শিল্পের উপরে ভরসা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তাদের বরাতে জুটেছিল উন্নয়নশীল দেশের তকমাও। আপাতত প্রবল বিদ্রোহের জেরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা দেশত্যাগী। সেইসঙ্গে বিগত মাস দুয়েক ধরে চলা অশান্তির পরিবেশে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবল ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের গৌরব এবং ভরসার বস্ত্র শিল্পও।

আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহারই করেছে বিভিন্ন ভারতীয় এক্সপোর্ট কোম্পানি এবং বস্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলি। এমনকি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই কার্যত তাদের পকেটে ঢুকেছে লাভের বড় অঙ্ক। যেখানে সোমবারে একটা বড় অংকের লগ্নি মুছে গিয়েছিল শেয়ার বাজার থেকে। লগ্নিকারীদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল। জাপানে হঠাৎ করে ব্যাঙ্কের সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াতেই শেয়ারবাজারে এই বিপত্তি বলে দাবি করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে পড়শী দেশ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে দাবি অনেকের।

এবার সেই টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফায়দা পেলেন ভারতের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ক্রমশ বিভিন্ন কাপড় ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলি শেয়ারের গ্রাফ চড়চড়িয়ে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের যা অবস্থা, তাতে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে ভারতীয় কোম্পানিগুলির রমরমা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা, দাবি বিশেষজ্ঞদের। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গোকুলদাস এক্সপোর্টের শেয়ারমূল্য একদিনে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ শতাংশ। যা কার্যত রেকর্ড। অপরদিকে কে পি আর মিলস, বর্ধমান টেক্সটাইলসের মতো কোম্পানিগুলির শেয়ারের দরও ক্রমশ উর্ধ্বমুখী।

শুধু ইউরোপের বাজার নয় রীতিমতো পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে নিজেদের প্রোডাক্ট আরো বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে ভারতীয় এই কোম্পানিগুলি। আর এই রকম পরিস্থিতিতে তাদের শেয়ারের এই মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা তাদের সাফল্যের দিকটাকেই ইঙ্গিত করছে। একটা সময় বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলি বিভিন্ন রকম মেটেরিয়াল থেকে শুরু করে পুরো কমপ্লিট প্রোডাক্ট বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের টেক্সটাইল হাবগুলি রীতিমত ফুলেফেঁপে উঠেছিল।

কিন্তু আকস্মিক ছন্দপতন হয় কোভিড মহামারীর সময়। তার পরবর্তীকালেও কোভিডের ধাক্কা থেকে বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটাই সময় লাগছিল। তার মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আবারও মার খায়। আর এবার দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিদ্রোহ, সরকার পতন, গণঅভ্যুত্থানের মত বিষয়ে রপ্তানিকারী এবং বিনিয়োগকারী উভয়ের ক্ষেত্রেই যথেষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে তারা ভারতের মতো রাজনৈতিক স্থিতিশীল দেশের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

কথায় বলে কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। আপাতত বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের সর্বনাশা সময়ে, ভরা শ্রাবণেই পৌষ মাসের অবস্থা ভারতীয় বস্ত্র শিল্প মহলে। প্রাচ্যের ম্যানচেস্টারের হৃতগৌরব আবারো পুনরুদ্ধারের আশায় তাই পুরোদমে ঝাঁপাতে চলেছে ভারতীয় কোম্পানিগুলি। যা অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।