কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় টানা বৃষ্টি, কী পরিস্থিতি রয়েছে রাজ্য?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ওপর অবস্থান করছে মৌসুমী অক্ষরেখা (Monsoon Seasonal Axis)। এর ফলের দিনভর চলছে বৃষ্টিপাত (Rainfall) । কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে…

rains

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) ওপর অবস্থান করছে মৌসুমী অক্ষরেখা (Monsoon Seasonal Axis)। এর ফলের দিনভর চলছে বৃষ্টিপাত (Rainfall) । কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে বৃষ্টি। বেশ কিছু এলাকায় জমেছে জল। ব্যাহত হয়েছে যানবাহন ও যোগাযোগ পরিষেবা। নাজেহাল হয়ে কখনও বিক্ষোভ দেখালেন সাধারণ মানুষ, আবার কখনও ক্ষোভ উগরে দিয়ে দায়ী করলেন প্রশাসনকে। কোন এলাকাগুলি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ? আসুন দেখা নেওয়া যাক।

সকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে দেখা যায় কার্শিয়াঙে (Kurseong)। দিনভর প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে এই জেলায় বয়ে গেছে ঝোড়া হাওয়া । রাস্তায় বেরিয়েছিলেন হাতে গোনা মানুষ। শুক্রবার বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এই জেলা। এখানকার নয়া বাজার এলারকার জগদীশ মন্দির কাছে পরে থাকতে দেখা কে একাধিক বাড়ির টিনের চাল। প্রবল হাওয়ার কারণে এই চালগুলি উড়ে এসে বিপজ্জনক ভাবে পড়ছিলো রাস্তার ওপর। কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে ছিল রাস্তায়।

   

লাগাতার বৃষ্টির হওয়ায় জলমগ্ন হয়েছে বীরভূমের (Birbhum) নানুর এবং লাভপুরের কিছু অংশ। জল জমতে দেখা গেছে ফতেপুরের নানুর-বোলপুর রাজ্য সড়কে। এর ফলে যাতায়াত করতে পারছে না টোটো, অটো এবং মোটর সাইকেল ।ছোট গাড়িকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পার করে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।বীরভূমে বেহাল অবস্থায় চন্দ্রভাগা নদীর ওপর সেতু। এই সেতু পেরিয়ে দিয়েই সিউড়ি যাওয়ার প্রধান সড়কে পৌঁছতেন একধিক গ্রামের বাসিন্দারা। দূরে একটি বিকল্প সেতু থাকলেও সেটিও রয়েছে জলের তলায়। এই সবের ম্যাচে কপি নদীর জলসার বাড়ায় আতংকিত সাধারণ মানুষ। বোলপুরে গোয়ালপাড়া সেতুতে বর্তমানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। যাতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকির সঙ্গে সেতু না পার হন সেই দিকে নজর রাখছেন তাঁরা।

পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলার একাধিক এলাকা প্লাবিত। এর মধ্যে রয়েছে ভাতার বাজার-সহ সংলগ্ন এলাকা। বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে প্রবল জলস্রোত। ভাতার বাজারের বেশ কয়েকটি জায়গায় প্লাবনের কারণে গৃহবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বাসিন্দারা।

কলকাতার তথ্য-প্রযুক্তি তালুকের যাত্রীদের জন্য সুখবর, একাধিক রুটে সরকারি বাস পরিষেবার ঘোষণা

বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে জলের তলায় রয়েছে আসানসোল (Asansol) শিল্পাঞ্চলের একটি অংশ। নদীর তীরে থাকা বাড়িগুলিতে জল ঢুকে গেছে। বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার জলে ডুবে রয়েছে বেশ কুচু এলাকায় । দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎ দফতরের আঞ্চলিক ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বাগদি সাধারণ মানুষকে বলেছেন যে কোনও পরিস্থিতেই যেন বিদ্যুতের খুঁটি বা তারে হাত না দেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখা হয়েছে অন্ডাল বিমানবন্দরকেও। নদীর তীরে থাকা বাড়িগুলিতে জল ঢুকে গেছে। বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার জলে ডুবে রয়েছে বেশ কুচু এলাকায় । দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। বিদ্যুৎ দফতরের আঞ্চলিক ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বাগদি সাধারণ মানুষকে বলেছেন যে কোনও পরিস্থিতেই যেন বিদ্যুতের খুঁটি বা তারে হাত না দেন তাঁরা।

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেছেন, “বার বার প্রশাসনকে নদী ড্রেজিং করার কথা জানালেও তারা পদক্ষেপ করেনি। নদীর পার দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে।প্রশাসন পাপ করছে। আসানসোলের রেলপাড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় যে সব বাড়িতে জল ঢুকে যাচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দারা কোথায় থাকবেন, কী খাবেন— এ সব ভাবেনি প্রশাসন। গাড়ুই নদী অবিলম্বে সংস্কার না করলে বিপদে পড়তে চলেছি আমরা।”

হুগলিতে (Hooghly) বুধবার টানা বৃষ্টির ফলে জলের তলায় একাধিক নিচু এলাকা। এছাড়াও বেহাল অবস্থায় রয়েছে সড়ক। জল জমে থাকছে রাস্তার খানাখন্দে। স্কুলে যেতে একধিক সমস্যার সম্মুখীন পড়ুয়ারা। বিজেপির নেতারা , দাদপুরে রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি মানুষের । পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের ঝুমি নদীতে বাড়ছে জলস্তর । জলস্রোতের বর্তমানে ভেঙে পড়েছে লোহার কাঠামোওয়ালা বাঁশের একটি সাঁকো। এর ফলেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে বেশ কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে ঘাটাল শহরের । নদী পারাপারের জন্য নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

বাঁকুড়াতে (Bankura) সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন একাধিক সড়ক ও সেতু। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে যে এই জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত, ২৪ ঘন্টায় ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার সংযোগ করানো সড়কে রয়েছে দুটি সেতু , তবে বর্তমানে দুটোতেই জমেছে জল । এর ফলে বন্ধ রাখতে হয়েছে যান চলাচল। পূর্ব বর্ধমান জেলার পুর দপ্তরের অধীনে এলাকার সাতটি ওয়ার্ড জলমগ্ন। বেশ কিছু মানুষের ঠিকানা এখন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। পূর্ব বর্ধমানের নালা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বাদশাহি রোড অবরোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল কৃষ্ণনগর। শহরের নিচু এলাকায় প্রবেশ করেছে বাড়তে থাকা ভাগীরথী নদীর জল । কোথাও রুয়েছে হাঁটুর সমান জল, কোথাও কোমর সমান জল। জল জমেছে নবদ্বীপ শহরেও। শান্তিপুর পুরসভা, রানাঘাট, চাকদহ এবং কল্যাণীর বেশ কিছু ওয়ার্ডও জল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কবে উদ্যোগ নেবে প্রশাসন? উত্তরের অপেক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দারা ।