ভূমিধসে বিপর্যস্ত কেরল। ওয়েনাডে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ভূমিধসের জেরে এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে খবর। নিখোঁজের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দক্ষিণী রাজ্যজুড়ে হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে ফের কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত সামনে এল। বুধবারই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন যে, কেরলে অত্যধিক বৃষ্টির পূর্বাভাস আগে থেকেই জারি করেছিল কেন্দ্র। জানানো হয়েছিল তার জেরে ধস নামতে পারে। এক সপ্তাহ আগে সতর্ক করা হয়েছিল কেরল সরকারকে। অমিত শাহের এই দাবি অবশ্য খণ্ডণ করেছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ। কেন্দ্রের তরফে এমন কোনও সতর্কবার্তা আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি-কে মন্ত্রী বীনা জর্জ বলেছেন, অমিত শাহের দাবি ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং বিভ্রান্তিকর’। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের সব বার্তা খতিয়ে দেখা হয়েছে, তবে সেগুলো সবই লাল সতর্কতা ছাড়াই এসেছিল। মন্ত্রীর কথায়, ‘আমরা কেন্দ্র থেকে সব যোগাযোগ যাচাই করেছি, এবং ভূমিধসের বিষয়ে কোনও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়নি। জেলা প্রশাসন একটি কমলা সতর্কতার ভিত্তিতে কাজ করেছে, যা তীব্রতার মাত্রা কম।’
মন্ত্রী বীনা জর্জের সংযোজন, ওয়ানাডে জেলা প্রশাসন কমলা সতর্কতার ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অনেক বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওয়েনাডে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা, বড় সিদ্ধান্ত নিল Jio
কী বলেছিলেন অমিত শাহ?
বুধবার রাজ্যসভায় কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শাহ বলেন, ‘ওয়েনাডে ভূমিধসকাণ্ডের অন্তত এক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই কেন্দ্র কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকারকে এ নিয়ে সতর্ক করেছিল। কেরলে আগেভাগেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার সময় থাকতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর বন্দোবস্ত করেনি। তা করা হলে প্রাণহানি কিছুটা হ্রাস পেত।’ তাঁর আশ্বাস, মোদী সরকার এই সঙ্কটের সময়ে কেরালার জনগণের পাশে রয়েছে, সব ধরণের সহায়তা করা হবে।
কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া-
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান, বিপর্যয়ের রাতেই ওয়ানাড পরিদর্শন করেছিলেন। কেরালাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উভয় কন্ট্রোল রুম সবসময় সচল থাকছে, রাজ্যেকে সমস্ত সম্ভাব্য সহায়তা দেওয়া হবে। ভারতীয় সেনা ও বিমান বাহিনী সক্রিয়ভাবে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত । এনডিআরএফ, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী (এসডিআরএফ) অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ করছে। উদ্ধারে বিশেষ কুকুরের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর দু’টি কলাম এবং ভারতীয় বায়ুসেনার দু’টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কেরল নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয়। উভয় কক্ষের অধিবেশনে, বিরোধী সাংসদরা শক্তিশালী আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবারও ওয়েনাড থেকে জিতেছিলেন। তবে, সেখানকার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেয়েছেন। কিন্তু, রাহুল ওয়ানাডের ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্ত সাহায্য দান এবং এই ধরণের দুর্যোগে অবদানকারী পরিবেশগত উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাহুল গান্ধী এবং তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা বৃহস্পতিবারই ওয়ানাডের ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করবেন।
বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য, রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে দাবি করেছেন যে- রাহুল কখনও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ভূমিধসের বিষয়টি তোলেননি। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, ওয়ানাডে অবৈধ দখল, ধর্মীয় সংগঠনগুলির চাপের কারণে উপেক্ষা করা, বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।