হিন্দুত্বের জিগির তুলে বঙ্গ-‘যোগী’ হওয়াই লক্ষ্য শুভেন্দুর ?

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ছুটলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) বক্তব্য কোটাবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা ইচ্ছে করে ভারতবর্ষ, হিন্দুত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী…

Portrait photo of Suvendu Adhikari, Indian politician and leader of opposition in West Bengal, with a gentle smile and a serious expression.

ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ছুটলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) বক্তব্য কোটাবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা ইচ্ছে করে ভারতবর্ষ, হিন্দুত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অপমান করেছে।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) দাবি করেছেন যে, এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সিডির আকারে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই-কমিশনারের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, যেকোনো মূল্যে এই সমস্ত উগ্র ভারতবিদ্বেষী আন্দোলনকারীদের ভারতীয়দের অপমানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

   

কিন্তু শুভেন্দুর হঠাৎ এই বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাত্রার অন্য সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ মহামন্ত্র কে অপমান করেছেন বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা। তারই বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে শুভেন্দুর মুখে এদিন উঠে আসে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীলা প্রভুপাদ, মতুয়া মতাবলম্বীদের ধর্মগুরু শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর এবং শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের পাশাপাশি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নামও।

বিজেডিকে টুকে রাজ্য বাজেট পেশ বিজেপির! বিস্ফোরক ওডিশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন

লক্ষ্যণীয়ভাবে বাংলার হিন্দু সমাজের কাছে এই নামগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। অপরদিকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে ‘মোদীর সন্তান’ বলেও আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছিল। আজ সেই প্রসঙ্গে তুলে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অপমানের অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু।

যদিও শুভেন্দুর দাবী, ভারতবিরোধী বিভিন্ন মন্তব্য এবং অপমান নিয়েই অভিযোগ জানাতে তিনি এসেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহলের মতে এর পিছনে একটি দীর্ঘমেয়াদি অঙ্ক লুকিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে এপার বাংলায় চলে আসা মানুষের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। দীর্ঘদিন ভারতবর্ষে থাকার সুবাদে তারা ভারতীয় নাগরিক এবং ভোটার। এদের মধ্যে মতুয়াদের সংখ্যাটাও যথেষ্ট।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মূলত ধর্মীয় নিপীড়ন এবং নিরাপত্তার অভাবই এই উদ্বাস্তু হয়ে বঙ্গে আগমনের ইতিহাস। কোথাও না কোথাও সেই জায়গাটাকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা কি করছেন শুভেন্দু? বিশেষ করে মমতার বাংলাদেশ মন্তব্যের পরেই যেন সেই সোনালী সুযোগ আরও বেশি করে হাতে চলে এসেছে বিরোধী দলনেতার।

এমনিতেই সংখ্যালঘু তোষণের বিরুদ্ধে কথা বলা বঙ্গের বিজেপির মূল রাজনৈতিক এজেন্ডা। মুসলিম ভোট ব্যাংকে অনৈতিক তোষণ এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ নাগরিকত্ব নিয়ে বরাবর সরব হয়েছে বিজেপি। অনেকের মতেই তার সুফল হাতে নাতে পাচ্ছে বঙ্গের বিজেপি। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেলেও বিরোধীদল হিসেবে ক্রমশ উঠে আসাটা বঙ্গের রাজনীতিতে হিন্দুত্ব ইস্যুর সংক্রমনেরই ফল। অপরদিকে বিজেপির বিশেষ কার্যকরণী মিটিংয়ে ঘুরিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরোধিতা করা শুভেন্দু কে যেন আরও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাতে পরিণত হতে অনেকটা সাহায্য করছে।

শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) সেই বক্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতি থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতিতেও জল ঘোলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গের একশ্রেণীর সাধারণ মানুষ শুভেন্দুর স্বপক্ষেই মুখ খুলেছেন। আবার দলের অনেক নেতাই সরাসরি শুভেন্দুকেই সাপোর্ট করেছেন। যা আদতে শুভেন্দুর নৈতিক জয় বলেই মনে করছেন অনেক রাজনীতিবিদ। এবার হিন্দুত্বের অপমানের ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দরজায় হাজির শুভেন্দু।

‘হিংসা ছড়ানো’ জামাত ইসলামি নিষিদ্ধ হোক প্রস্তাবে সবুজ সংকেত শেখ হাসিনার

২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেই শুভেন্দু লড়াইয়ে নামতে চলেছেন? বিশেষজ্ঞ মহলের মতে বিজেপির হাতে এছাড়া হয়ত আর কোনও অপশন নেই। কারণ বারংবার দেখা গিয়েছে বঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কার্যত কোনো প্রভাবই ফেলেনি। তার উপরে মহিলা ভোটারের বড় অংশটাই এখনও সরকারের পক্ষেই। ফলে কট্টর ধর্মীয় রাজনীতির লড়াই ছাড়া আর অন্য কোন রাস্তা আপাতত খোলা নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।

তাই হিন্দুত্বের অবমাননা এবং প্রধানমন্ত্রীর অপমানের ইস্যুতে শুভেন্দুর এই পদক্ষেপকে সুচিন্তিত বলেই অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে শুভেন্দুর মুখে আজ যে নামগুলি শোনা গিয়েছে, বঙ্গের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে তাদের প্রভাব ব্যাপক। বৈষ্ণব, মতুয়া এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অনুসারীদের ঘুরিয়ে বার্তা দিলেন শুভেন্দু? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ক্রমশ নিজেকে নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শুভেন্দু, ধর্মীয় ফ্যাক্টরটাকে বারবার সামনে আনতে চাইছেন বলেই অনেকের মত।

বঙ্গের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলার যোগী আদিত্যনাথ হতে চাইছেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর এই গেরুয়া বুলডোজারের ধাক্কায় ২৬-এ তৃণমূলের দুর্গে ধস নামে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।