বারবার সিংহ গর্জনে চমকাচ্ছে সিপিআইএম, নিম্নস্তরে বামফ্রন্ট অবলুপ্তির দাবি

রাজ্যে এক যুগের বেশি সময় CPIM নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার নেই। ১৯৭৭-২০১১ সাল পর্যন্ত এই সাড়ে তিন দশকের টানা বামফ্রন্ট সরকার চলেছিল। তারপর ক্রমাগত ভোট ব্যাঙ্কে…

রাজ্যে এক যুগের বেশি সময় CPIM নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার নেই। ১৯৭৭-২০১১ সাল পর্যন্ত এই সাড়ে তিন দশকের টানা বামফ্রন্ট সরকার চলেছিল। তারপর ক্রমাগত ভোট ব্যাঙ্কে ধস নেমে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পুঁজি। রাজ্য থেকে একমাত্র বাম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। রাজ্যসভায় তাঁর মেয়াদ ফুরোলেই পশ্চিমবঙ্গ একেবারেই বাম শূন্য জনপ্রতিনিধি হয়ে যাবে।

বিকাশেই কি শেষ! এমনই প্রশ্ন ঘুরছে বাম সমর্থকদের মধ্যে। কারণ, বাম বিধায়ক ও সাংসদ শূন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরবর্তীতে রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠানোর সুযোগ নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা ও বিধানসভা ইতিমধ্যে বাম শূন্য। এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্টের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

   

এই সংকটে শুরু হয়েছে সিংহনাদ! রাজ্য বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিআইমের সঙ্গে ছোট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের সংঘাত ক্রমে বাড়ছে। ফ্রন্টের অভ্যন্তরে জোটের বড়দা সিপিআইএমের কোনও নির্দেশ শুনছেনা ফর়ওয়ার্ড ব্লক। সূত্রের খবর, ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে সম্মান জানিয়েই তাঁর সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের কথাকাটি এখন নিত্য ইস্যু। জানা যাচ্ছে, সিপিআইএমের বড় অংশ কোনওভাবেই বামফ্রন্ট ধরে রাখতে নারাজ।

Modi 3.0: মোদীর সরকার কি পড়ে যাবে? বিশ্ব সেরা আর্থিক সংবাদপত্রের রিপোর্টে দিল্লি গরম

বাম জমানা শেষের পর থেকেই নির্বাচনী সমঝোতা, আসন বন্টন ইস্যুতে ফরওয়ার্ড ব্লক বনাম সিপিআইএম ‘ঝগড়া’ চরমে। শরিক নিয়ম ও জোট ভেঙে বারবার প্রার্থী দিয়ে বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে বিদ্রোহী চরিত্র ধরে রাখতে মরিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক। এতেই কুপিত সিপিআইএমের কটাক্ষ, হাতি কাদায় পড়লে পিঁপড়ে লাথি মারে!

জানা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের সময় বামফ্রন্ট শরিক দলের হয়ে ভোটে নামতে তীব্র অনীহা ছিল বাম সমর্থকদেরই। তাদের যুক্তি, শরিকদের সংগঠন নেই। তারা ভরসা করে সিপিআইএমের উপর। কেন তাহলে বামফ্রন্টের নিয়মে আসন বন্টন হবে। নিচু তলা থেকে গরম বার্তা উপর তলায় গেলেও ভোটের খাতিরে নিয়মনিষ্ঠ সিপিআইএম কর্মীরা ভোটে জান লড়িয়ে দেন। তবে ফল শূন্যই থেকে গেছে।

পাঁচ ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদ, ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে কী বললেন ঋতুপর্ণা?

নির্বাচনের পর তাদের ক্ষোভ ও হতাশার আগুনে দগ্ধ হচ্ছেন নেতৃত্ব। তাদেরও একাংশ বামফ্রন্ট অবলুপ্তি চান। সিপিআইএমের শাখা সংগঠনগুলির তরফে রাজ্য দফতরে বার্তা যাচ্ছে, বামফ্রন্ট ভাঙা হোক। তারপর বিদ্রোহী শরিকদের শক্তি বোঝা যাবে।

বামফ্রন্টের আরও দুই শরিক সিপিআই ও আরএসপি নীরব। এই দুই বাম দলের তুলনায় রাজ্যে বেশি সংগঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক। তাদের সঙ্গেই সিপিআইএমের সংঘাত প্রবল। রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকগুলিতে দু তরফের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে সিপিআই ও আরএসপি।

পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শিক্ষা অভিযানের টাকা বন্ধ করল কেন্দ্র, ঘুম উড়েছে নবান্নর

বাম জমানায় শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের মত জ্বলন্ত ইস্যুতে সিপিআইএমের ভূমিকায় সরব ছিল আরএসপি ও সিপিআই। ততকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমির আন্দোলনে রাশ টানতে ফরওয়ার্ড ব্লকের উপর ভরসা করেছিল সিপিআইএম। এর কারণ, ততকালীন ফরওয়ার্ড ব্লক বাংলা কমিটির সম্পাদক অশোক ঘোষের সঙ্গে মমতার নিকট সৌজন্য। আলোচনা সফল না হলেও ফরওয়ার্ড ব্লকের ভূমিকা ছিল আলোচিত। ফলে বামফ্রন্ট অন্দরে সিংহ দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। সেই ভূমিকা ধরে রেখে গর্জন করছে সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত দলটি। ফ্রন্ট ভাঙলে সেই গর্জন থামবে বলছেন বড় শরিক সমর্থকরা।