একসময় যাদের ঘর ভেঙেছিলেন, আজ নিজের ঘর বাঁচাতে লজ্জা ভুলে তাদের দিকেই হাত বাড়াতে হচ্ছে মোদীকে? অন্তত মহারাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতিতে, এরকম জল্পনাই ভেসে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক মহলে! আর তার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, উদ্ভব ঠাকরে এবং শারদ পাওয়ার কে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া এনডিএ শিবির!
যদিও কাঙ্খিত ৪০০ পার বা একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেয়ে, চন্দ্রবাবু এবং নিতিশ কুমার এই দুই নেতার ভরসাতে সরকার এই যাত্রায় সরকার গড়েছেন মোদি, কিন্তু আবহাওয়ার থেকেও তাড়াতাড়ি পাল্টি খাওয়ার রেকর্ড করা নীতিশকে যেমন পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না মোদী, তেমনই অতীতে বিজেপি সরকারের পড়ে যাওয়ার মূল কারিগর চন্দ্রবাবু নাইডুর উপরেও সেই অর্থে ভরসা নেই তার? আর তাই কি একদা ভরসাযোগ্য জোট সঙ্গী ঠাকরে পরিবারের অভাব আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে মোদীকে?
ঘটনা্র সূত্রপাত, মহারাষ্ট্র বিজেপি নেতা চন্দ্রকান্ত পাটিলের, উদ্ভব ঠাকরে কে নিয়ে করা মন্তব্যে! যেখানে তিনি পরিষ্কার বলছেন, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে উদ্ভব থাকলে পরিশ্রমের ফল সব থেকে বেশি পেয়েছে কংগ্রেস! এমনকি উদ্ভবের শারীরিক অবস্থা নিয়েও ভাবনার কথা শোনা গিয়েছে পাটিলের গলায়! মহারাষ্ট্রে নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক হারিয়েও, রীতিমতো দাপটের সাথে লড়াই করে নটি আসন দখল করেছে উদ্ভবপন্থী শিবসেনা দল! যা শিবসেনা ভেঙে ঠাকরে পরিবারকে কোণঠাসা করে মহারাষ্ট্রের গদিতে বসা একনাথ শিন্ডেকে একরকম কষিয়ে থাপ্পর বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল!
অপরদিকে নিজের ভাইপো অজিত পাওয়ার এর কাছে নিজের হাতে তৈরি দল এনসিপির সমস্ত ক্ষমতা সহ নির্বাচনী প্রতীক হারিয়ে, নতুন নাম নিয়ে একেবারে লোকসভা ভোটের আগে আগেই নতুন উদ্যমে দল তৈরি করে যেভাবে আটটি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন প্রবীণ নেতা শারদ পাওয়ার, তাও রীতিমতো অকল্পনীয় ছিল ! এবার এনসিপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বর্তমানে দলের সমস্ত কর্তৃত্বের অধিকারী অজিতের গলায় কাকা শরদের এনসিপি গঠনের ক্ষেত্রে সর্বকালীন যে অবদান নিয়ে মুখ খুলেছেন, তাতেও কিন্তু অন্য একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে!
মহারাষ্ট্রে যে রকম কংগ্রেস, উদ্ভব এবং শারদের জুটি কোন ঠাসা করেছে বিজেপির এনডিএ গোষ্ঠীকে, সেরকমই গোটা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, বিজেপি এই মুহূর্তে চরম চাপে রয়েছে এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা! তাই মহারাষ্ট্র থেকে এই দুই দল মিলিয়ে ১৭ টা সীটের সাথে এই দুই বর্ষীয়ান এবং ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতার সমর্থন নিজেদের দিকে আনতে মরিয়া হয়েই কি নতুন গ্লেম প্ল্যান টিম মোদীর?
কারণ রাজনৈতিক মহল মনে করছে যে ১৭ টা আসন সহ এঁদের সমর্থন যদি বিজেপির দিকে আসে তাহলে বিজেপি অনেকটাই চাপমুক্ত হবে! এবং চাহিদা মতন মন্ত্রীত্ব না দেওয়া নিয়ে এনডিএর শরিক দল গুলোর মধ্যে যে চোরা ক্ষোভের ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা যদি পরে দাবানলেও পরিণত হয়, তাহলেও পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে!
কিন্তু উদ্ভব একরোখা বলে পরিচিত, নিজের দল ভেঙেছে যারা, তাঁদের সাথে হাত মেলাবেন কি তিনি? শারদ পাওয়ারও ভাইপো অজিতের বিশ্বাসঘাতকতা ক্ষমা করবেন কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন! আর এই দুইয়ের উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে দিল্লিতে বসে হাসি যে ক্রমশ চওড়া হবে রাহুল, সোনিয়া এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মুখে, এটা হলফ করে বলাই যায়।