News Desk: পুরভোটের ফলপ্রকাশের পর খোশমেজাজে পাওয়া গিয়েছিল ফিরহাদ হাকিমকে৷ হুডখোলা বাসে করে নাতনি সাড়ে তিন বছরের আয়াতকে নিয়ে কলকাতা ঘোরাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ পুরভোটে সাফল্যের আনন্দ নিজের নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই ভাগ করে নিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম৷
পুরভোটে নিজের ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৪,৯১৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন ফিরহাদ৷ পরিবহনমন্ত্রী একাই পেয়েছেন ৭৯ শতাংশের বেশি ভোট৷ নিজের ওয়ার্ড থেকে ফিরহাদের জয় নিশ্চিতই ছিল৷ কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রের সাতটি ওয়ার্ডে সাফল্যের জন্য তৃণমূল তাকিয়ে ছিল ফিরহাদের দিকেই।
পুরভোটে বন্দর দুর্গ অক্ষত রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এবার ২৯, ৩৯, ৪৩, ৪৪, ৬২ ও ৬৬ সহ কুড়িটি ওয়ার্ড থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তালিকায় ছিলেন ৬২ ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সানা আহমেদ ও ফৈয়াজ আহমেদ খানের মতো তরুণ হেভিওয়েটরা।
ঘাসফুল শিবিরের জয়ী মুসলিম প্রার্থীদের মধ্যে একুশে নজির গড়েছেন ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খান। অস্ট্রেলিয়া থেকে ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফৈয়াজ বস্তিবাসীর সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন। এই ওয়ার্ড থেকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দীকে বিপুর ভোটে পরাজিত করেছেন কলকাতা পুরভোটে জয়ী কসবার বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে। ফৈয়াজ শুধু জেতেননি, উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছেন ভোটের মার্জিনও। ওই ওয়ার্ড থেকে ৯৫ হাজার ৩৮টি ভোট পড়েছে, যা শতাংশের বিচারে ৭৮.৫৯ শতাংশ।
ফৈয়াজ জিতেছেন ৬২ হাজার ৪৫ ভোটে। সাফল্যের নিরিখে উজ্জ্বল ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সানা আহমেদের নামও। ওই ওয়ার্ড থেকে পুরভোটে জয়ী হয়েছেন ইকবাল আহমেদের কন্যা সানা আহমেদ।ভোটের ফল বলছে, সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকেই বিপুল সমর্থন পেয়েছেন লরেটোর প্রাক্তনী সানা।
ঘাসফুল শিবিরের হয়ে জয় পেয়েছেন
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ইকবাল আহমেদ
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মহম্মদ জসিমুদ্দিন
৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রেহানা খাতুন
৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আমিরুদ্দিন ববি
৬০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মহম্মদ ইয়েজুজার রহমান
৬১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মনজর ইকবাল
৬৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হয়েছেন সাম্মি জাহান
৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নিজামুদ্দিন শামস
১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শামস ইকবাল
১৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শামসুজ্জামান আনসারি
১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রেহমত আলম আনসারি
১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ফরিদা পারভিন
১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শেখ মুস্তাক আহমেদ
১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবু মহম্মদ তারিক
৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সগুফতা পরভিন জয় ছিনিয়ে আনতে না পারলেও ঘাসফুল শিবিরের আওতায় আসতে পারে এই ওয়ার্ড। সূত্রের খবর, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী নির্দল প্রার্থী আয়েশা কনিজ নাম লেখাতে পারেন তৃণমূলে।
জোড়াফুলের উপরি পাওনা হতে পারে ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডও। গুঞ্জন বলছে, এই ওয়ার্ডের জয়ী নির্দল প্রার্থী রুবিনা নাজও হাতে নিতে পারেন তৃণমূলের পতাকা। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পিছনে ফ্যাক্টর হয়েছিল মুসলিম ভোট। পুর নির্বাচনেও তার অন্যথা হয়নি।
পরিসংখ্যান বলছে, কুড়িটি ওয়ার্ডে মুসলিম প্রার্থীর ওপরে ভরসা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর দুর্দশিতা যে প্রশ্নাতীত, তা আরও একবার প্রমাণ করেছে ভোটের ফল। তেমনিই মুসলিম সমাজও যে জোড়াফুলকে হাত উপুর করে সমর্থন জানিয়েছে, তার প্রমাণ বন্দর এলাকা-সহ ফৈয়জ-সানাদের মতো প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের অঙ্ক। এমনকি, ফিরহাদ হাকিমের আরও একবার মেয়র হওয়ার পিছনেও এই সাফল্যকেই উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।