স্ত্রী মাছ কি মুগ্ধ করতে সমুদ্রের তলদেশে নকশা আঁকে পুরুষ পাফার মাছ (Puffer Fish) । শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি। সেই নকশার আকার হয় ছোট্ট পাফার মাছের তুলনায় বিশ গুণ। এইজন্যই এই কাজ করতে দিনের পর দিন সময় লাগায় তারা। প্রজনন সময় এমন অদ্ভুত ভাবে সঙ্গীকে আকর্ষণের চেষ্টা করতে দেখা যায় জাপানিজ পাফার ফিসকে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে লাভ সার্কেল বা ভালোবাসার গোলক। এই গোলকের আকার আকৃতি নকশা দেখেই পাফার ফিস সঙ্গী নির্বাচন করে।
ধারণা করা হয় নকশায় থাকা দাগের দূরত্ব দেখে স্ত্রী পাফাররা পুরুষ মাছটির আকার সম্বন্ধে জানতে পারে। যে মাছ আকারে যত বড়ো তার নকশা ততই বড়। এই দেখেই স্ত্রী মাছটি সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ মাছটি কত শক্তিশালী বা সন্তান নির্ধারণের সক্ষম। সমুদ্রের তলদেশের ওই নকশা কি ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে তারা।
প্রতি বছর বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত হল প্রজনন মরশুম। এই সময় এক একটি পুরুষ পাফার একাধিক স্ত্রী পাফারের সাথে মিলিত হতে পারে। সমুদ্রের তলদেশের নকশা তথা বাসাতেই ডিম পাড়ে স্ত্রী পাফার। ডিম পাড়া শেষ হলে স্ত্রী পাফারটি বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আর পুরুষ মাছটি ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। একবার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে সেও গৃহত্যাগী হয়। ফলে বাবা মায়ের সান্নিধ্য ছাড়া নিজে নিজেই বেঁচে থাকতে শেখে পাফার মাছ। এভাবে প্রতি বছর প্রজনন মরশুমে একবার করে নতুন নকশা তৈরি করে পাফার মাছ। একবার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে ওই বাসা আর ব্যবহার করেনা।
জাপানিজ পাফার মাছ সাদা রঙের, ফোঁটা ফোঁটা অধিক সুন্দর চামড়ার মাছ। এই মাছের প্রায় ১২০ টি প্রজাতি আছে। ১২০ টি প্রজাতি রঙ একে অপরের থেকে আলাদা। হরেক রকম রং দিয়ে অপূর্ব সুন্দর ভাবে গঠিত তাদের চামড়া। দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই বিষাক্ত হয় এরা। একটি পাফার মাছে থাকা বিষ ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রাণ হরনের জন্য যথেষ্ট। মানুষ তো বটেই অন্য শিকারী মাছের ক্ষেত্রে পাফার মাছকে বশে আনা বেশ কঠিন। তুলনায় অনেক দিনের সাঁতার কেটে বেড়ায় এরা। এই কারণে অনেক শিকারি মাছেরা এই মাছের অস্তিত্বই টের পায় না। শিকারি মাছের অস্তিত্ব টের পেলেই হা করে প্রচুর পরিমাণে জল গিলে ফেলে তারা। নিজের তুলনায় কয়েকগুণ একটি বড় বলে পরিণত হয় তারা। ফলে দেখে বোঝার উপায় থাকে না আদতে এটি একটি মাছ। পাফার ফিস বিষাক্ত হওয়া সত্বেও অনেক জায়গায় একে খাওয়া হয়। জাপানি খাবার হিসেবে এই মাছের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। জাপানি রেস্টুরে গুলিতে পাফার মাছের তৈরি পদের দাম আকাশ ছোঁয়া। এইজন্য একমাত্র পাঁচতারা হোটেলেই এগুলো কিনতে পাওয়া যায়। কেবলমাত্র একজন দক্ষ বাবুর্চি এই মাছের বিষাক্ততার দর করে খাবার উপযোগী করে তুলতে পারে।
প্রজাতি ভেদে পাফার মাছের আকার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোন কোনটি কয়েক ইঞ্চি বা কোন কোন টি ২-১ ফুট লম্বা হতে পারে। বড় আকারের পাফার ফিসরা সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণী ও শামুক খেয়ে থাকে। তার শক্তিশালী খোলস দিয়ে শামুকের খোলস পর্যন্ত ভেঙে ফেলতে পারে এরা।