বুকে ব্যাথার কারণে সূর্যকান্ত মিশ্রকে (Suryakanta Mishra) সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চেক আপের জন্য তিনি আপতত হাসপাতালে থাকবেন। জানাল সিপিআইএম। রাজ্যে বাম জমানার দীর্ঘ সময় মন্ত্রী ও পরে বিরোধী দলনেতা ছিলেন সুর্যবাবু। তিনি cpim রাজ্য সম্পাদক পদেও ছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বর্ষীয়ান বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। তার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতা নিজে চিকিৎসক। তিনি আচমকা বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। দলের কাছে সেই খবর যেতেই তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সংকটজনক ছিলেন। তাঁর চিকিৎসার সময় বারবার উডল্যান্ডস হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার চিকিৎসকদের সাথে বুদ্ধবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন সূর্যবাবু। তিনি এ রাজ্যে বাম জমানার দুই মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
মিশ্রের জন্ম নারায়ণগড়ের খাকুর্দায়। তিনি 1971 সালে কটকের শ্রীরাম চন্দ্র ভাঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন এবং তারপর 1974 সালে যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধিতে ডিপ্লোমা করেন। তিনি মেদিনীপুর কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। 1970 এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়াতে যোগ দেন। তিনি অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভার সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্যকান্ত মিশ্র 1973 সালে সিপিআই(এম) এর সদস্য হন। তিনি 1977 সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণগড় থেকে অসফলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরের বছর তিনি নারায়ণগড় থেকে একটি জেলা পরিষদ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি 1978 সালে মেদিনীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং 1991 সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
1991 সালে, তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন এবং রাজ্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে তিনি ভূমি ও ভূমি সংস্কার, পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, বায়োটেকনোলজির মন্ত্রী-ইন-চার্জ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি 2011 সাল পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভায় ছিলেন। তিনি 1988 সালে সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য এবং 1995 সালে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। 2002 সালে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। 2012 সালে তিনি দলের পলিটব্যুরোতে স্থান পান। 1996 সালে জ্যোতি বসুর বাম সমর্থিত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন।
2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম)-এর পরাজয়ের পর তিনি 2011 সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন এবং 2016 পর্যন্ত এইসপদে ছিলেন। তিনি 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণগড়ে প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হন। 2015 সালে, তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক হিসাবে বিমান বোসের স্থলাভিষিক্ত হন। এছাড়াও তিনি সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। তিনি 2018 সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সেক্রেটারি হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। 2022 সালে, তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং মোঃ সেলিম তার স্থলাভিষিক্ত হন। বয়সের কারণে সাংগঠনিক পদে আর নেই বর্ষীয়ান বাম নেতা।