লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। প্রত্যেক কণ্ঠে গর্জে ওঠার সুর। প্রত্যেক হৃদয়ে নির্যাতিতা দুই মহিলার পাশে থাকার অঙ্গিকার। মণিপুরের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমগ্র ভারতকে। প্রতিবাদে কলম (টুইট) ধরেছেন দেশের সব স্তরের মানুষ। বিজেপি শাসিত মণিপুরে রক্তাক্ত সংঘর্ষে শতাধিক নিহত। সংঘর্ষের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরব ছিলেন। দুই মহিলা নগ্ন করার ভিডিও বিতর্কে মুখ খুলেছেন তিনি। প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হৃদয় কাঁদার’ বার্তা, সকলেই দাঁড়িয়েছেন দুই নারীর পাশে।
সেই ভাইরাল ভিডিও তে দেখা গিয়েছে দুই নারীকে নগ্ন করে এলাকায় ঘোরানো হচ্ছে। প্রায় ৩০-৪০ জন জড়িত এই কাজে। ঘোরানোর সময় মহিলাদের শ্লীলতাহানি করতে দেখা যাচ্ছে যুবকদের। জানা গিয়েছে, ঘোরানোর পর গণধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত হয়েছে গ্রেফতার। এবার এই বিষয় মুখ খুললেন দুজনের মধ্যে এক নির্যাতিতার স্বামী।
নির্যাতিতার স্বামী একজন কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক। বিষণ্নতার সঙ্গে জানিয়েছেন যে দেশকে রক্ষা করতে পারলেও পারেননি তার স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে। নির্যাতিতার স্বামী অসম রেজিমেন্টের সুবেদার হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।
তিনি জানান, “আমি কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনীর (Indian Peace Keeping Force)অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কায়ও ছিলাম। আমি দেশকে রক্ষা করেছি কিন্তু আমি হতাশ যে আমার অবসর গ্রহণের পর আমি আমার বাড়ি, আমার স্ত্রী এবং গ্রামবাসীদের রক্ষা করতে পারিনি। আমি দুঃখিত, বিষণ্ণ।“ এক হিন্দী সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে নির্যাতিতার স্বামী ওই হিন্দি সংবাদমাধ্যমকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
নির্যাতিতার স্বামী জানান ৪ মে সকালে উত্তেজিত জনতা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ওই দুই নারীর পোশাক খুলে গ্রামের রাস্তায় লোকের সামনে হাঁটায়। তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারীদের অপমান করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।“
মণিপুরের ভয়ঙ্কর ভিডিও সামনে আসার পর থেকে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ভিডিওতে দেখা যায় দু’জন মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে। ভিডিও দেখে শিহরিত গোটা দেশ। মণিপুরের ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণদিত মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার দু-মাস পর গ্রেফতার হয়েছে মূল অভিযুক্ত। ঘটনার নিন্দা এবং শোকপ্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘মণিপুরে যা হচ্ছে তার জন্য আমি ব্যথিত। আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত।’
জাতিগত সংঘর্ষে (Manipur Violence) অশান্ত মণিপুর। উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যটি গত কয়েকমাস ধরে রক্তাক্ত। এবার বিজেপি শাসিত এই রাজ্য থেকে এলো ভয়াবহ আরও এক ছবি। উপজাতি মহিলাদের প্রকাশ্যে নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে।
এমন একটি ভিডিও প্রকাশের পর মণিপুরের পাহাড়ি এলাকায় উত্তেজনা বেড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে দুই মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে। আদিবাসী উপজাতীয় নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে ঘোষিত একটি পরিকল্পিত প্রতিবাদ মিছিল করে। তখনই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছিল।
ITLF-এর একজন মুখপাত্রের মতে, “ঘৃণ্য দৃশ্য ৪ মে কাংপোকপি জেলায় ক্রমাগত অসহায় মহিলাদের শ্লীলতাহানি করছে। এই নিরপরাধ মহিলারা যে ভয়ঙ্কর অগ্নিপরীক্ষার শিকার হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি শেয়ার করায় আরও ঘৃণ্য মানসিকতার পরিচয় দেয়। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
মণিপুরের এই দুই মহিলাকে রাস্তায় নগ্ন করে হাঁটানো হয়। ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। এর জেরে নতুন করে পরিস্থিতি গরম। ব্যাপক নিন্দা ও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে। দুই মহিলাকে একটি মাঠে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে একটি আদিবাসী সংগঠন।
আদিবাসী উপজাতীয় নেতাদের ফোরাম (ITLF) এর একটি বিবৃতি অনুসারে, ঘটনাটি গত ৪ মে রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায় ঘটেছিল৷ সমতলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং পাহাড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকি উপজাতির মধ্যে তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার দাবি নিয়ে সংঘর্ষের সময় এমন ঘটে।