ভারতীয় সংগীতের সঙ্গেই শপথ বাক্য পাঠ মীরা-পুত্রের

zohran-mamdani-new-york-mayor-victory-nehrus-quote-bollywood-celebration

নিউইয়র্ক: ইতিহাস গড়লেন ৩৪ বছরের জোহরান মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই তরুণ সমাজতন্ত্রী এখন আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের নতুন মেয়র। বিজয়ের রাতে তিনি যেভাবে উদ্‌যাপন করলেন, তাতে স্পষ্ট তাঁর রাজনীতি যেমন নির্ভীক, তেমনি তাঁর পরিচয়ও গভীরভাবে ভারতীয়।

Advertisements

   

ব্রুকলিনের কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিশাল বিজয় সমাবেশে হাজার হাজার সমর্থকের সামনে জোহরান নেহরুকে উদ্ধৃত করে বক্তৃতা শুরু করেন। তাঁর কণ্ঠে ভেসে আসে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঐতিহাসিক বাক্য “ইতিহাসে এমন মুহূর্ত খুবই বিরল, যখন আমরা পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনের পথে পা বাড়াই যখন এক যুগের অবসান ঘটে, আর দীর্ঘদিন ধরে দমিত জাতির আত্মা নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পায়। আজ রাতে, নিউইয়র্ক ঠিক সেটাই করেছে।”

এনামুরেশন ফর্ম বিলিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নড়েচড়ে বসল কমিশন

এই বাক্যটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা মাঠে করতালির ঝড় ওঠে। তারপরই জোহরান বলেন, “আজ নিউইয়র্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা শুধু এক জন মেয়রকে নয়, এক নতুন আদর্শকে বেছে নিয়েছি যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, সাশ্রয়ী ভাড়া, বিনামূল্যে বাসযাত্রা এবং সর্বজনীন শিশুসেবা হবে মৌলিক অধিকার।”

মাত্র ত্রিশ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি তুলে ধরেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি বিনামূল্যে পাবলিক বাস সার্ভিস, শহরজুড়ে শিশুদের জন্য ইউনিভার্সাল চাইল্ডকেয়ার, এবং ক্রমবর্ধমান বাড়িভাড়া স্থগিত রাখার পরিকল্পনা। তাঁর কথায়, “আমাদের শহর এমন এক স্থানে পরিণত হবে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা হবে। এটাই আমাদের যুগের সাহসী প্রতিশ্রুতি।”

Advertisements

বক্তৃতার শেষে ব্রুকলিনের রাস্তাগুলি পরিণত হয় বলিউডের মতো উৎসবে। সমর্থকরা ভারতীয় সঙ্গীত ও ঢোলের তালে নাচতে শুরু করেন, কেউ কেউ পতাকা হাতে “Mamdani for the People!” স্লোগান দিতে থাকেন। নিউইয়র্কের ইতিহাসে এমন বিজয় উদ্‌যাপন এর আগে দেখা যায়নি যেখানে শহরের বহুসংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটেছে এক রাজনৈতিক মুহূর্তের মধ্যে।

জোহরান মামদানি নিজেই একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি উগান্ডা-জন্ম ভারতীয় অভিবাসীর সন্তান, বেড়ে উঠেছেন কুইন্সে। তাঁর মা, বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, আর বাবা অর্থনীতিবিদ মাহমুদ মামদানি। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ছিলেন এক সামাজিক কর্মী ও হাউজিং অ্যাক্টিভিস্ট। ২০২০ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি দ্রুত প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন।

নিউইয়র্কের নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি আশার প্রতীক একজন এমন নেতা, যিনি শুধু শহরের অর্থনৈতিক সংকট নয়, ন্যায়বিচার, আবাসন অধিকার, ও সামাজিক সাম্যের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর প্রচারাভিযানে প্রায়ই দেখা গেছে ট্যাক্সিচালক, নার্স, ছাত্র, অভিবাসী শ্রমিকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “জোহরান মামদানির জয় কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং নিউইয়র্কের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম। এক এমন শহর, যা তার ‘cost of living crisis’ মোকাবিলায় সাহসী পথে হাঁটছে।”

তাঁর এই ঐতিহাসিক জয় প্রমাণ করল প্রগতিশীল রাজনীতি, অভিবাসী পরিচয় এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস একত্রে মিললে নতুন আমেরিকার প্রতিচ্ছবি গড়ে তোলা সম্ভব।বক্তৃতার শেষ মুহূর্তে জোহরান বলেন,“রাজনৈতিক অন্ধকারের এই মুহূর্তে, আলোর উৎস হবে নিউইয়র্ক।” এই বাক্যেই যেন ধরা পড়ল তাঁর গোটা রাজনৈতিক দর্শন প্রতিবাদের মধ্যেও আশা, অন্ধকারের মধ্যেও আলোর বিশ্বাস।