মার্কিন শহরের মেয়র হচ্ছেন মীরা নায়ারের ছেলে

Indian-origin politician and filmmaker Mira Nair’s son Zohran Mamdani leads the New York mayoral race, symbolising a new era of diversity in US politics.

নিউ ইয়র্ক, ৩ নভেম্বর: বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার-এর ছেলে জোহরান মামদানি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আগামী নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে লড়ছেন তিনি, এবং প্রাইমারি পর্যায়ে তাঁর জয় তাঁকে এনে দিয়েছে বিপুল জনসমর্থন। এই খবর শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং অভিবাসী ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

Advertisements

🌎 ব্যক্তিগত পটভূমি ও রাজনৈতিক যাত্রা

১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন জোহরান মামদানি। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদ, এবং মা মীরা নায়ার বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন Monsoon WeddingThe Namesake ছবির পরিচালক হিসেবে।

   

মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারসহ নিউ ইয়র্কে চলে আসেন। এখানেই বড় হয়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া—সবকিছুই তাঁকে রাজনীতির পথে নিয়ে আসে।

২০২০ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড (কুইন্স জেলা) থেকে নির্বাচিত হন। এটি ছিল একাধিক দিক থেকে ঐতিহাসিক — কারণ তিনিই প্রথম উগান্ডা-জন্ম দক্ষিণ এশীয় মুসলিম পুরুষ, যিনি এই পদে নির্বাচিত হন।

🗽 মেয়র পদপ্রার্থিতা ও উত্থান

২০২৫ সালের মাঝামাঝি তিনি ঘোষণা দেন যে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন।

তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল—

  • নিউ ইয়র্কে ভাড়ার নিয়ন্ত্রণ ও আবাসন সংস্কার,

  • গণপরিবহনকে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা,

  • শিশু সেবা ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি,

  • এবং উচ্চ আয়কারী নাগরিকদের ওপর কর বাড়িয়ে সামাজিক কল্যাণ বিস্তার

এই বাস্তবমুখী পরিকল্পনা তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে বিশেষ করে তরুণ ও নিম্ন আয়ের ভোটারদের মধ্যে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে তিনি প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো-এর মতো অভিজ্ঞ প্রার্থীদের হারিয়ে সবাইকে অবাক করেন। এখন তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের তরফে মূল প্রার্থী হিসেবে নভেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

🔍 কেন এই প্রচারণা ইতিহাস গড়ছে

বিশ্লেষকরা বলছেন—

জোহরান মামদানি যদি জয়ী হন, তবে তিনি হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মুসলিম মেয়র।

এটি শুধু দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির নয়, বরং অভিবাসী সমাজের জন্যও গর্বের প্রতীক।

Advertisements

নিউ ইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে আয়-বৈষম্য ও ভাড়ার চাপে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে, মামদানির প্রচারণা বাস্তব সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

🎬 মীরা নায়ারের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

ছেলের রাজনৈতিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিচালক মীরা নায়ার বলেছেন,

“জোহরান ছোট থেকেই ন্যায়বোধে দৃঢ়। ওর মধ্যে রাজনীতির চেয়ে মানবিকতার জোর বেশি।”

তাঁর বক্তব্যে যেমন সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগের প্রতিফলন দেখা যায়, তেমনি তাঁর ছেলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও সেই মানবিকতা প্রতিফলিত।

বিশ্লেষকদের মতে, মীরা নায়ারের সিনেমা যেমন ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজবাস্তবতার সেতুবন্ধন করেছে, তাঁর ছেলে তেমনি রাজনীতিতে বৈচিত্র্য, ন্যায় ও অন্তর্ভুক্তির বার্তা দিচ্ছেন।

🌍 বাংলা কমিউনিটির কাছে এর গুরুত্ব

নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাঙালি অভিবাসীদের কাছে এটি অনুপ্রেরণার গল্প।

জোহরান মামদানি প্রমাণ করেছেন— পরিচয় নয়, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মই নেতৃত্বের প্রকৃত ভিত্তি

তাঁর এই উত্থান প্রমাণ করছে যে দক্ষিণ এশীয় প্রজন্ম আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

জোহরান মামদানির উত্থান এক নতুন প্রজন্মের রাজনীতির প্রতীক—যেখানে বৈচিত্র্য, আদর্শ ও বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটেছে।

যদি তিনি নির্বাচিত হন, তবে এটি শুধু একটি রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং অভিবাসী সমাজের অন্তর্ভুক্তি ও ন্যায়ের জয়

মীরা নায়ারের ছেলের এই যাত্রা ইতিমধ্যেই ইতিহাসের পথে এক বিশাল পদক্ষেপ।