নিউ ইয়র্ক, ৩ নভেম্বর: আমেরিকার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। তাঁর এই সাফল্য শুধু এক ব্যক্তির রাজনৈতিক উত্থান নয়, বরং অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
১৯৯১ সালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মাহমুদ মামদানি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার-এর সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি নিউ ইয়র্কে চলে আসেন এবং ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।
২০২০ সালে মামদানি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন কুইন্স জেলার প্রতিনিধি হিসেবে। এর মাধ্যমে তিনি প্রথম উগান্ডা-জন্ম দক্ষিণ এশীয় পুরুষ এবং তৃতীয় মুসলিম রাজনীতিক হিসেবে স্টেট অ্যাসেম্বলিতে পৌঁছান।
🌆 নিউ ইয়র্কের মেয়র দৌড়ে এগিয়ে মামদানি
২০২৪ সালের শেষ দিকে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন জোহরান মামদানি। তাঁর মূল অঙ্গীকার ছিল শহরের আবাসন সংকট, ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন।
২০২৫ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে তিনি প্রবীণ রাজনীতিক ও প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো-এর মতো প্রার্থীদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। ভোট গণনায় দেখা গেছে, মামদানি বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে এখন মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূল প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন।
💬 রাজনৈতিক দর্শন ও জনপ্রিয়তা
নিজেকে “Democratic Socialist” হিসেবে পরিচয় দেন মামদানি। তাঁর প্রচারণার মূল বার্তা—
ভাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থা,
গণপরিবহন আরও কার্যকর ও সহজলভ্য করা,
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
এই বার্তাই তাঁকে নিউ ইয়র্কের তরুণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
🌍 বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া ও তাৎপর্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
যদি তিনি নির্বাচিত হন, তবে নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়বেন।
এটি মার্কিন রাজনীতিতে অভিবাসী ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে।
তবে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে। মামদানির বামপন্থী নীতিমালা এবং সোশ্যালিস্ট ভাবনা নিউ ইয়র্কের মধ্যপন্থী ভোটারদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন কিছু পর্যবেক্ষক।
ভারতীয় ও বাঙালি প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য
জোহরান মামদানির উত্থান ভারতীয় ও দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানদের মধ্যে গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাংলাভাষী অভিবাসীদের কাছে এটি এক রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা, কারণ তাঁর মধ্যে তারা দেখছেন দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসীদের সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।
তিনি শুধু একজন প্রার্থী নন, বরং অভিবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর—যিনি আমেরিকার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তি, ন্যায়বিচার ও বৈচিত্র্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে জোহরান মামদানির এই উত্থান নতুন প্রজন্মের রাজনীতির প্রতীক।
তিনি প্রমাণ করেছেন—রাজনীতি শুধু উত্তরাধিকার নয়, আদর্শ ও জনগণের বিশ্বাসের ওপরও দাঁড়াতে পারে।
চূড়ান্ত ফলাফল নভেম্বর মাসে প্রকাশ পাবে, কিন্তু এখনই বলা যায়— তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।


